বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউক্রেন থেকে যেভাবে ফিরলেন দুই ছাত্রী

  •    
  • ৮ মার্চ, ২০২২ ২০:৩৯

দুজনেই দুজনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার অভিজ্ঞতা লিখে রাখতে চান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গল্প বলার জন্য।

যুদ্ধক্ষেত্র ইউক্রেন থেকে ভারতে ফিরেছেন মেডিক্যালের দুই শিক্ষার্থী। তাদের এই ফেরার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। নানা বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে দেশের মাটিতে।

ইউক্রেনের রাজধানীর খারকিভের বাংকারে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দমদমের জপুরের দীপশিখা দাস। আর বীজপুরের গোয়ালাপাড়ার পূজা ছিলেন জাপোরিঝিয়াতে।

ইউক্রেন ছেড়ে কীভাবে অবশেষে সম্প্রতি তারা দেশে ফিরেছেন তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ।

দীপশিখা এক বস্ত্রে বেরিয়ে এসেছিলেন। শুধু নিজের ল্যাপটপটা নিতে পেরেছিলেন তিনি। জামার পকেটে রোজনামচার ডায়েরিটায় লিখেছেন সেসব কথা।

তিনি জানান, খারকিভ থেকে দীর্ঘ ট্রেনযাত্রা লিভিভ পর্যন্ত। সেখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে চেক পয়েন্টে পৌঁছেও মাইনাস ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় প্রায় ১৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে সীমান্ত পার হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয়।

২৮ ফেব্রুয়ারি জাপোরিঝিয়ার স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্রী পূজাসহ ১৪৯৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে জাপোরিঝিয়া স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তের দিকে রওনা হয়।

তিনবার ট্রেন বদলে উজগোরো হয়ে জাহোনি সীমান্ত পেরিয়ে গত ২ মার্চ হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পৌঁছান পূজা। নিজের মোবাইলের নোটবুকে সেই যাত্রাপথের খুঁটিনাটি তিনি লিখে রেখেছেন। তা পাঠিয়েছেন স্বজন-বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপে।

পরিস্থিতি বদলালে ফের ইউক্রেনে ফিরে যেতে দুই শিক্ষার্থীই। দীপশিখা আর পূজা বাড়ি ফিরেছেন সোমবার। মেয়েকে দমদম বিমানবন্দরে আনতে গিয়েছিলেন পূজার মা বর্ণালী ঘোষ। আনন্দে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন তিনি।

বর্ণালী বলেন, অবশেষে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেছে, এর থেকে শান্তির আর কী-ই বা হতে পারে! ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। আগে ও একটু ধাতস্থ হোক।

পূজার বাবা অনুপবাবুও বলেন, দিন গেল বটে কয়েকটা! মেয়েটার কথা ভেবে রাতে ঘুমোতে পারিনি। এখন যুদ্ধটুদ্ধ না হলেই হয়।

দূতাবাসের পক্ষ থেকে সবার দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হলেও অনেকেই ইতিমধ্যে অভিযোগ তুলেছেন অসহযোগিতা নিয়ে। বাড়ি ফিরে দীপশিখা বলেন, ‘জানি, এই পরিস্থিতিতে সকলকে ঠিকঠাক পরিষেবা দিয়ে দেশে ফেরানো মোটেই সহজ নয়। তবু একটু ভাল ব্যবহারের আশা করেছিলাম।

‘মাইনাস ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় হাইপোথারমিয়ায় অনেকের মতো আমিও জ্ঞান হারিয়েছিলাম বুদুমেরাস সীমান্তে। দূতাবাসের কাছে সাহায্য চাওয়ায় শুনতে হয়েছিল, ছিলেন তো বাঙ্কারে, এখানে তার চেয়েও কি খারাপ আছেন?’

গত ১ মার্চ খারকিভ থেকে বেরিয়ে প্রথমে রুশ সীমান্ত পেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে সে দেশের সেনার বাধার মুখে পড়েন দীপশিখারা। এর পরে ট্রেনে চড়ে ও হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ডের তারাস্কায় পৌঁছান ৪ মার্চ। সেখানে একটি ভারতীয় আশ্রমে তাদের প্রথমে রাখা হয়। পরে রেজসোপে একটি হোটেলে।

দীপশিখা বলেন, ‘৩০০ জনের জন্য মাত্র দুটি শৌচাগার ছিল। খাবারও মেলেনি। অসুস্থ অবস্থায় দিল্লি নেমেছিলাম পরদিন। দেশে ফেরার পর অবশ্য যথেষ্ট ভাল ব্যবস্থা ছিল। রাজ্য সরকারও উদ্যোগী হয়েছিল বাড়ি পৌঁছে দিতে।’

নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন দুই পড়ুয়াই। পূজা বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করব, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে যাব।’

দুজনেই দুজনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার অভিজ্ঞতা লিখে রাখতে চান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গল্প বলার জন্য।

এ বিভাগের আরো খবর