মানবজাতির ইতিহাস এক অর্থে যুদ্ধের ইতিহাস। যুগে যুগেই বিভিন্ন গোত্রে, দেশে, জাতিতে যুদ্ধ হয়ে আসছে। এ যুদ্ধ কখনও স্বার্থের, কখনো সম্পদের, কখনো বিদ্বেষের কারণে হয়ে এসেছে। কিন্তু এ যুদ্ধে শুরুতে শিশুদের ভূমিকা থাকা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু প্রতিটি যুদ্ধেই শিশুদের মাশুল দিতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। মাঝেমধ্যে আয়লান কুর্দির মতো শিশু যখন যুদ্ধের কারণে প্রাণ হারায়, যুদ্ধবিরোধীরা তখন যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। তবু আবারও যুদ্ধ হয়, আবারও মারা যায় আয়লান কুর্দিরা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে। বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানে গোলা, আকাশ থেকে এসে পড়ে বোমা। ঠিক তেমন এক বোমার আঘাতে মারা গেছে ইউক্রেনের ৭ বছর বয়সী এক ছোট্ট বালিকা এলিসা হেন্স।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ গোলা যখন ইউক্রেনের ছোট্ট শহর ওখতিরকাতে আঘাত হানতে থাকে, তখন জীবন বাঁচাতে অন্য অনেকের মতোই দাদার সঙ্গে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আশ্রয় নেয় এলিসা। ছোট্ট নাতনির জীবন বাঁচাতে তার দাদাই হয়তো তাকে স্কুলে নিয়ে এসেছিল। ভেবেছিল যুদ্ধের মধ্যে স্কুলই হয়তো হবে নিরাপদ স্থান। কিন্তু সেখানেও আঘাত হানে রুশ বোমা। ঘটনাস্থলেই এলিসার সামনে মারা যান তার দাদা। আহত হয় সে।
রুশ গোলায় বিধ্বস্ত কিন্ডারগার্ডেন স্কুল। ছবি: সংগৃহীত
হামলার পরের ছবিগুলোতে দেখা যায়, স্কুলের প্রধান প্রবেশপথের চারপাশে মৃতদেহ পড়ে আছে আর কর্মীরা শিশুদের নিয়ে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। সেদিনের হামলায় এলিসা হেন্সসহ ৬ জন মারা যায়। এ সময় নার্সারিতে লুকিয়ে থাকা আরেক শিশুও আহত হয়।
পরে ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে আনা হয় এলিসা হেন্সকে। ঠিক একদিন পরই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় এলিসা।
বলা হচ্ছে, সেই হামলায় রাশিয়া ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ছবিতে স্কুলটির বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের চিহ্ন দেখা গেছে, তবে রুশ কর্তৃপক্ষ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
ঘটনাটি ইউক্রেনে রুশ হামলার দ্বিতীয় দিনে ঘটলেও তা আবারও সামনে নিয়ে এসেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির সহধর্মিণী ওলেনা জেলেনস্কা। তিনি দাবি করেছেন, রুশ সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে ও কুৎসিতভাবে ইউক্রেনীয় শিশুদের হত্যা করছে।
ওলেনা জেলেনস্কা এ সময় ন্যাটোকে নো-ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশুদের রক্ষা করুন, কারণ এটিই আগামীকাল আপনাদের শিশুদের রক্ষা করবে।’
শুধু এলেনাই নয়, ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপলের ছোট্ট শিশু কিরিলও রুশ গোলার আঘাতে আহত হলে তার মা-বাবা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার জন্য কিছুই করতে পারেননি।
হাসপাতালে আহত কিরিলকে নিয়ে আসছে বাবা-মা
কিয়েভের মেয়ে পোলিনা তার মা-বাবা, ভাইয়ের সামনেই রাস্তার মধ্যেই রুশ গোলার আঘাতে মারা যায়। সে সময় তার বোনও আহত হয়।
১৪ বছর বয়সী বালক আর্সেনির মাথায় প্রজেক্টাইলের টুকরা আঘাত করলে তাকে হাসপাতালেও নেয়া সম্ভব হয়নি। এর আগেই সে প্রাণ হারায়।
৬ বছর বয়সী সোফিয়া তার দেড় মাস বয়সী ভাই, মা দাদি ও দাদাসহ গাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হয়।
ওলেনা ইন্সটাগ্রাম পোস্টে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৩৮ জন শিশু রুশ হামলায় নিহত হয়েছেন।
তিনি সেই পোস্টে বলেন, ‘রুশ সেনারা যখন দাবি করে তারা বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা করছে না। তাদের তখন এই ছবিগুলো দেখান।’