নো-ফ্লাই জোন হলো এমন একটি এলাকা, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু বিমানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ফলে বিধিনিষেধের আওতায় থাকা বিমানগুলো সে অঞ্চলে উড়তে পারে না। অর্থাৎ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো যদি ইউক্রেনের আকাশে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করে, তবে তার লক্ষ্য হবে রুশ বিমানগুলো। অর্থাৎ ন্যাটো জোট তখন রুশ যুদ্ধবিমানগুলোকে ইউক্রেনের আকাশে উড়তে দিবে না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ন্যাটোর কাছে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করার দাবি জানানোর কারণ এটাই যে, রুশ যুদ্ধবিমান তখন ইউক্রেনের শহরগুলোতে বোমা হামলা চালাতে পারবে না। জেলেনস্কির যুক্তি ছিল, দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের রুশ হামলা থেকে বাঁচাতে এটিই একমাত্র উপায়। কিন্তু নো-ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নয় পশ্চিমারা।
‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা মানেই কী রাশিয়া তা মেনে চলবে?
নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করলেই রাশিয়া তা মেনে চলবে, বিষয়টি এমন নয়। ফলে রুশ যুদ্ধবিমানগুলোকে নো-ফ্লাই জোন মানতে বাধ্য করার জন্য ন্যাটোকে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মধ্যে রুশ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করার বিষয়টিও থাকবে। ফলে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত বেঁধে যেতে পারে।
এর আগে ন্যাটো বসনিয়া ও লিবিয়ায় নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করেছিল।
কেন ন্যাটো নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করছে না?
ইউক্রেন ও রাশিয়া কোনো দেশই ন্যাটোর সদস্য নয়। সে ক্ষেত্রে ন্যাটোর নীতিমালা অনুযায়ী এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য নয় পশ্চিমা এই সামরিক জোট। এদিকে রাশিয়া বরাবরই ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে আসছে। সে ক্ষেত্রে ন্যাটোর এমন পদক্ষেপ যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর ন্যাটো চাইছে না রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে।
ন্যাটো শুরু থেকেই ইউক্রেনকে সমর্থন ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে। রাশিয়ার আক্রমণকেও তারা একটি সার্বভৌম দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে দেখে। তবে জোটটি এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না, যাতে রাশিয়ার মতো পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধে যায়। কারণ এর পরিণতি হতে পারে পরমাণু যুদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির সর্বোচ্চ পদাধিকারী সিনেটর মার্কো রুবিও সিএনএনের এক টকশোতে বলেন, নো-ফ্লাই জোন মানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়া।
রুবিও বলেন, ‘সবাইকে বুঝতে হবে নো-ফ্লাই জোন মানে কী। এটি এমন কোনো নিয়ম নয় যে আপনি চালু করবেন আর সবাই তা মেনে চলবে। এটি রুশ ফেডারেশনের বিমানকে গুলি করে নামানোর ইচ্ছা পোষণ।’
যা বলছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট
এর আগে ইউক্রেনের আকাশে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা না করায় ন্যাটোর প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি।
শুক্রবার এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘ন্যাটোর এই সিদ্ধান্তের কারণে আকাশপথে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা আরও বাড়বে।’
ন্যাটোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নো ফ্লাই জোন' ঘোষণা না করে ইউক্রেনের শহর ও গ্রামে বোমা হামলার সবুজ সংকেত দিয়েছে ন্যাটো। আজ থেকে ইউক্রেনে যারা মারা যাবে তারা আপনার (ন্যাটো) কারণে, আপনার দুর্বলতার কারণে, আপনার ঐক্যের অভাবের কারণে মারা যাবে।’