খণ্ডকালীন যুদ্ধবিরতির মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্র ইউক্রেন থেকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ আবারও বাধার মুখে পড়েছে।
স্থানীয় সময় রোববার আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রস জানিয়েছে, কমপক্ষে দুই লাখ মানুষকে সংঘাতপূর্ণ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোল ও আশপাশের এলাকা থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে রুশ বাহিনীর গোলা ছোড়া অব্যাহত থাকায় ভেস্তে গেছে বেসামরিক মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ।
এর আগে, মারিউপোল শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধের মধ্যে আটকে থাকা কমপক্ষে চার লাখ নিরাপরাধ মানুষকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
তবে শনিবার হওয়া যুদ্ধবিরতি আবারও ভেস্তে গেল রকেট হামলার কারণে। এ বিষয়ে দুইপক্ষই এক অপরকে দোষারোপ করছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যানটন গেরাশচেনকো বলেন, ‘রুশ বাহিনীর আক্রমণাত্মক আচরণের কারণে গ্রিন করিডোর বলে আর কিছুই বাকি থাকল না। তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কাকে-কখন গুলি করে হত্যা করতে হবে।’
স্থানীয় সময় শনিবার নতুন করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় রাশিয়া। এতে বলা হয়, রোববার সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খণ্ডকালীন এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে।
পূর্ব ইউরোপের দেশটির বন্দরনগরী মারিউপোল থেকে বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নিতে এ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
রুশ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসলেও মারিউপোল শহর কর্তৃপক্ষ আগেও জানিয়েছে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি মানা হচ্ছে না। মারিউপোল ও আশপাশের এলাকায় রুশ গোলাবর্ষণ চলছে। ফলে থেমে আছে নিরাপদ করিডর দিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ তুলে মারিউপোল কর্তৃপক্ষ বলে শহরে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে মস্কো।
সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে শনিবার একটি করিডর স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্রেমলিন। এর কয়েক ঘণ্টা না যেতেই রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠে।
মারিউপোল শহর কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি মানা হচ্ছে না। মারিউপোল এবং এর আশপাশে গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। যুদ্ধবিরতি আবার কার্যকর হলে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, ‘মানবিক করিডর’-এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে মারিউপোলের পরিস্থিতি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা আরটি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ অবশ্য আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছেন যে, মারিউপোলসহ বিভিন্ন জায়গায় বেসামরিক নাগরিকদের ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে ইউক্রেনের যোদ্ধারা।
বিদ্রোহী অধ্যুষিত ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে গত সপ্তাহে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর পরই ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে পুতিন বাহিনী। রাজধানী কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরের সামরিক ঘাঁটিগুলোয় গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে মস্কো।