রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে ইউক্রেনকে অস্ত্রের জোগান দিয়েছে, একইভাবে চীনের বিরুদ্ধে লড়তে তাইওয়ানকে সহযোগিতা করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিটার ডাটন।
তিনি বলেছেন, চীনকে সম্ভাব্য আগ্রাসন থেকে বিরত রাখতে অস্ট্রেলিয়া যা করার দরকার, তা-ই করবে।
এবিসির ইনসাইডার্স অনুষ্ঠানে রোববার সকালে এক সাক্ষাত্কারে ডাটন দাবি করেন, চীন পরমাণু অস্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করছে।
ওই সময় তিনি তাইওয়ানকে দখল করার জন্য চীনের হুমকিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করেন।পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে ইউক্রেনকে অস্ত্র সাহায্য করেছে, একইভাবে অস্ট্রেলিয়া তাইওয়ানকে সহায়তা করবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলে চীনের আগ্রাসন থামাতে আমাদের যা করার দরকার, সেটা আমরা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে ইউক্রেনে এখন যা হচ্ছে, তাইওয়ানে তেমনটা হলে কী এরপর আর কোথাও হবে না? কিসিঞ্জার ও অন্যরা ইন্দো-প্যাসিফিকের ইতিহাস নিয়ে কথা বলার সময় যে, শাখা রাজ্যের কথা বলেছেন, চীন কি সে মডেলটি রাখতে চায়? মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম বা ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য এর অর্থ কী দাঁড়াবে?’
ডাটনের মতে, কোনো পদক্ষেপের জন্য নির্দিষ্ট মূল্য দিতে হয়, আবার নিষ্ক্রিয়তার জন্যও মূল্য দিতে হয়।
তিনি বলেন, ‘তাই শান্তির জয় দেখার প্রচেষ্টা আমাদের। একই সঙ্গে প্রচেষ্টা চীন হোক বা রাশিয়া বা অন্য যে কারও আগ্রাসনকে প্রতিহত করা।’
এ বিষয়ে পরিষ্কার উত্তর দেয়ার আহ্বান জানানো হলে ডাটন কোনো কিছু বাতিলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন।তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় স্বার্থ আছে এমন যেকোনো দ্বন্দ্ব বা সংঘাতের প্রতি আগ্রহ আছে দেশের।’অস্ট্রেলিয়ার এ মন্ত্রী আরও বলেন, অদূর ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়ার পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে ‘খুব শক্তিশালী প্রতিরোধ বার্তা’ পাঠাবে। চীন এ অঞ্চলে বিপুল শক্তি সঞ্চয় করছে বলেও তিনি সতর্কবার্তা দেন।
তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীন ব্যবস্থা নিলে যুক্তরাষ্ট্রকে অস্ট্রেলিয়া সাহায্য করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডাটন বলেন, ‘আমাদের দেশ ও আমাদের মিত্রদের রক্ষা করা যদি আমাদের জাতীয় স্বার্থে হয়, তবে আমরা সেই সময়ে সিদ্ধান্ত নেব যে, দেশের জন্য কোনটা সবচেয়ে ভালো হবে। অন্যথায় এখানে ভান করার কোনো অর্থ নেই।’
সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব অনিশ্চিত এক সময়ে বাস করছি। এটা শুধু পরের কয়েক বছর নয়, পরবর্তী কয়েক দশক। আমাদের অঞ্চলে আমরা শান্তি চাই। আপনি যদি দুর্বলতার অবস্থান থেকে তর্ক করেন, তবে আপনার সেই শান্তি থাকবে না।
‘অস্ট্রেলিয়াকে শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে হবে। আমরা যদি ন্যাটো জোটের মতো শক্তিশালী মিত্রদের সঙ্গে থাকি, তাহলে আমরা সবচেয়ে দৃঢ় অবস্থানেই আছি।’সাক্ষাত্কারে ডাটন আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকার শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তার পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত ঘোষণা করবে।
তার দাবি অনুযায়ী, ২০৪০ সালের লক্ষ্যমাত্রার আগেই অস্ট্রেলিয়া অনেক তাড়াতাড়ি এ সক্ষমতা অর্জন করতে চলেছে। এর আগে নভেম্বরে ডাটন দাবি করেন, বেইজিং জোর করে তাইওয়ানকে দখলের চেষ্টা করলে চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার যোগদান না করা ‘অচিন্তনীয়’। তার এ মন্তব্য বেইজিংয়ে ক্ষোভের জন্ম দেয়।
গ্লোবাল টাইমস সম্পাদক হু শিকিং ডাটনকে সতর্ক করেন, অস্ট্রেলিয়া যদি এমন পদক্ষেপ নেয় তাহলে তাদের তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটোকেই ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।