রাশিয়া-ফিনল্যান্ডের সীমান্ত ক্রসিং ভ্যালিমা। ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি থেকে এই সীমান্ত ক্রসিংয়ের দূরত্ব মাত্র ১২০ মাইল। সীমান্তে ভিড় নেই। কিন্তু রাশিয়ার ভেতরে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ফিনল্যান্ডে ঢোকার অপেক্ষায়। এরা কেউই ইউক্রেনীয় নয়। ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রুশ নাগরিকরাই রাশিয়া ছাড়তে চাচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক রুশই তাদের নিজেদের দেশ রাশিয়া থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। দেশটিতে এরই মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে ইউক্রেন হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক আইন জারি করতে পারেন।
এমন পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়তে মরিয়া রুশদের ইউরোপের ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দেশ ছাড়ার একমাত্র উপায় হলো সড়ক পথ বা ট্রেন।
এমন একজন তরুণী যিনি রাশিয়া ছেড়ে পশ্চিমে পাড়ি জমাচ্ছেন, তার সঙ্গে কথা হয়েছে বিবিসির। সেই তরুণী নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছেন, কারণ তিনি নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগেই ইইউ ভিসা পেয়েছেন।
ইউক্রেনে যা ঘটছে, তাতে তিনি হতাশ। সেই তরুণী বলেন, ইউক্রেনের জনগণ আমাদের মানুষ, আমাদের পরিবার। আমাদের তাদের হত্যা করা উচিত নয়।
তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সে কি ফিরে যাওয়ার কথা ভাববে? সেই তরুণী বলেন, ‘এই ভয়ংকর সরকার থাকাকালীন নয়।’
তিনি আরও বলেন, বেশির ভাগ রুশ যুদ্ধ চায় না। তবে পুতিনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি রয়েছে।
ইউক্রেনীয়দের প্রতি যেমন ফিনল্যান্ডবাসীর সহানুভূতি রয়েছে। তেমনি তার মতো রুশদের প্রতিও রয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ফিনল্যান্ড ন্যাটোভুক্ত দেশ নয়। রাশিয়ার পক্ষ থেকে দেশটিকে ন্যাটো সদস্যভুক্তির ক্ষেত্রে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ফিনিশরা মনে করে, তাদের নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্র হওয়ার এখনই সময়।
অন্য একজন ৩০ বছর বয়সী নারী, যিনি এরই মধ্যে রাশিয়া ছেড়ে তুরস্কের শহর ইস্তাম্বুলে থাকা শুরু করেছেন। তিনি ভয় পাচ্ছেন, সোভিয়েত আমলের গোপন পুলিশদের মতো হয়তো তৎপরতা শুরু হবে।
যদি মার্শাল ল সত্যিই প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘোষণা করেন, তবে তিনি যা খুশি তা করতে পারবেন। তিনি তার উদ্দেশ্য এরই মধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর কাছে স্পষ্ট করেছেন, পুরো ইউক্রেন দখলের আগ পর্যন্ত তিনি থামবেন না।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণার পর ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী।
প্রথম ৯ দিনের হামলায় রাশিয়ার ৯ হাজার ১৬৬ সেনা নিহতের দাবি করেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার ৯৩৯টি সাঁজোয়া যান, ১০৫টি আর্টিলারি সিস্টেম, ৫০টি এমএলআরএস, ১৮টি বিমানবিধ্বংসী ওয়ারফেয়ার সিস্টেম, ৩৩টি বিমান, ৩৭টি হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছে।
এর বাইরে রাশিয়ার ৪০৪টি যানবাহন বা মোটরযান, দুটি লাইট স্পিডবোট, ৬০টি জ্বালানি ট্যাংক, তিনটি ড্রোন ধ্বংসের দাবি করেছে ইউক্রেন।
এদিকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর খেরসনের দখল নিয়েছেন রুশ সেনারা। দেশটিতে থাকা ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও এখন রুশ সেনাদের দখলে।