পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার জেরে রুশ অপেরাশিল্পী আনা নেত্রেবকোকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে দিয়েছে নিউ ইয়র্কের ‘মেট্রোপলিটন অপেরা’ (মেট) কর্তৃপক্ষ।
এই সুপারস্টারের ভক্তদের জন্য দুঃসংবাদ যে আগামী দুই মৌসুম মেটের অনুষ্ঠানের তালিকা থেকে আনাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এমনটি জানিয়েছে মেট কর্তৃপক্ষ।
ধ্রুপদী সংগীতের মিশ্রণে মেট্রোপলিটন অপেরা উত্তর আমেরিকায় মেট অপেরা নামেই পরিচিত।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, রুশ হামলার প্রতিবাদে বিশ্বের অনেক দেশে নিন্দা জানিয়েছে হাজারো মানুষ।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমর্থক হওয়ার জেরেই আনার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
মেটের তরফ থেকেও তেমন ইঙ্গিত মিলেছে। তবে আনাকে বাদ দেয়ার সরকারি কারণও খোলসা করেছে মেট কর্তৃপক্ষ।
ইউক্রেনে যুদ্ধের উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতিতে ওই অপেরা সংস্থার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পুতিনের সমর্থক কোনো শিল্পীকেই তারা আর মেট-মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে দেবেন না।
বরাবরই পুতিনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত আনা। ২০১২ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও পুতিনের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এর দুই বছর পর ফের নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেন আনা।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের দোনেৎস্কের একটি অপেরা হাউসে আর্থিক সাহায্য করার অনুষ্ঠানে ওই শহরের নিয়ন্ত্রক রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পতাকা তুলে ধরেছিলেন আনা।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহী অধ্যুষিত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মেট-এর মঞ্চে গত দুই দশক দুই শতাধিক অপেরায় শ্রোতাদের মাতিয়েছেন আনা। তবে বিশ্বের অন্যতম অপেরাশিল্পীকে মেট শর্ত দিয়েছিল, ইউক্রেনে যুদ্ধের পর পুতিন ও রাজনীতি থেকে তার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
তবে মেট-এর শর্ত মানতে নারাজ আনা। তার পরই তাকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মেট কর্তৃপক্ষ।
সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার পিটার গেব সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘মেট এবং অপেরার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হলো। মেট-এর ইতিহাসে অন্যতম সেরা শিল্পী আনা। তবে ইউক্রেনে যেভাবে নিরীহ মানুষদের হত্যা করছেন পুতিন, তাতে আর কোনো উপায় ছিল না।’
শুধু আমেরিকাতেই নয়। ইউক্রেনে যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়েই পুতিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরালো হচ্ছে। খোদ পুতিনের দেশেই তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন হাজারো নাগরিক।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের পর যুদ্ধবিরোধী স্লোগান, প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করেছেন মস্কোসহ রাশিয়ার একাধিক শহরে। পুতিনের নিজের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রতিবাদীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও দেখেছে বিশ্ব।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধ করারও অভিযোগ উঠেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যেই রাশিয়াজুড়ে সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি প্রতিবাদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চলতি শতকের অন্যতম বড় যুদ্ধের প্রতিবাদ রাশিয়ার গণ্ডি ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা দেশেও। টোকিও থেকে সিডনি, বুয়েনস আইরেস থেকে মেক্সিকো—পুতিনের সামরিক-স্বপ্নের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন অগণিত নাগরিক।
ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় দিনে জার্মানির বার্লিন শহরে প্রায় এক লাখের বেশি মানুষের জমায়েত দেখা গিয়েছে। ব্রানডেনবার্গ গেট থেকে রাশিয়ান দূতাবাস পর্যন্ত মিছিল করে যায় জনতা। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধস্মারকে ভিড় করেছেন প্রতিবাদীরা।
বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কও যুদ্ধ থামাতে পুতিনকে অনুরোধ করেছেন।
বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজধানী কিভ। যার প্রভাবে রুশ শিল্পীকে সরতে হলো আমেরিকান মঞ্চ থেকে।