একেই বলে ভাগ্য। তালেবান আতংকে এক বছর আগে পরিবার নিয়ে আফগানিস্তান থেকে ইউক্রেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন আজমল রাহমানি। কৃষ্ণ সাগর ঘেঁষা শহর ওডেসাতে সপরিবারে বাস করতে থাকেন রাহমানি। সেখানে খুঁজে নিয়েছিলেন জান্নাত।
কিন্তু শান্তিপ্রিয় দেশটিতেও থিতু হতে পারেননি রাহমানি। রুশ অভিযানের মুখে আবারও ফেরারি হতে হলো রাহমানি ও তার পরিবারকে।
৪০ বছরের রাহমানি ন্যাটোর হয়ে গত ১৮ বছর কাজ করেছেন কাবুল বিমানবন্দরে। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার শুরুর চার মাস আগে হুমকি পেতে থাকেন রাহমানি। তখনই সিদ্ধান্ত নেন দেশ ছাড়ার।
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে জীবন ভালোই কাটছিল। বাড়ি, গাড়ি সব ছিল। ভালো বেতনও পেতাম। বাড়ি, গাড়ি সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছি। সবকিছু হারিয়েছি।’
ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর প্রতিবেশী দেশগুলো বিশেষ করে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও রোমানিয়ায় পালিয়ে যান লাখো মানুষ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বলছে, সংখ্যাটা পাঁচ লাখের বেশি। এর মধ্যে পোল্যান্ডেই আশ্রয় নিয়েছেন তিন লাখ মানুষ।
ইউক্রেন ছেড়ে আসাদের বেশিরভাগই সেদেশের নাগরিক। এ ছাড়া আফগানিস্তান, কঙ্গো, ভারত ও নেপাল থেকে আসা অভিবাসীরাও ছুটে বেড়াচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।
সীমান্ত পেরোনোর সময় ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে রাহমানি বলেন, ‘এক যুদ্ধ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আসি। এই দেশেও যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। দুর্ভাগা আমি।’
কথাগুলো যখন বলছিলেন তখন রাহমানির পাশে ছিল তার সাত বছরের মেয়ে মারওয়া। ধূসর একটি টেডি নিয়ে খেলছিল সে।
রাহমানি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর নাম মিনা। ১১ বছরের এক ছেলে আছে, নাম ওমর। তাদের নিয়ে এক হাজার ১১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্তে পৌঁছাই। শেষের ৩০ কিলোমিটার পথ হেঁটে এসেছি।’
কিছুপর সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ডের মেডিকা গ্রামে অন্যান্য শরণার্থীদের সঙ্গে অবস্থান নেন রাহমানি ও তার পরিবার। সেখান থেকে বাসে করে তাদের নেয়া হবে প্রজেমিসল শহরে।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থা ওকালনি (সালভেশন) ফাউন্ডেশনের আইনজীবী টোমাস পিটারজাক বলেন, ‘পোলিশ ভিসা ছাড়া আসা অন্যদের মতো রাহমানি ও তার পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। পোল্যান্ডকে খুব দ্রুত এই ইস্যুতে আইন সংশোধন করতে হবে।’
রাহমানি বলেন, ‘ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। তবে সীমান্তের পোলিশ প্রান্তে উদ্বাস্তুদের সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবক এবং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি তাতে মনে শক্তি পেয়েছি।’