বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মধ্যপ্রাচ্য কেন রাশিয়ার বাহুডোরে?

  •    
  • ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:৪২

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বুঝতে পেরেছে, তাদের অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি প্রত্যাহারের ক্ষতি পূরণের জন্য নিজেদের জোটে বৈচিত্র্য আনতে হবে। আমেরিকান সৈন্যদের আতিথ্য দানকারী প্রধান দুই দেশ সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত। তবে অস্ত্র চুক্তি ও অধিকার ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা অম্ল-মধুর সম্পর্কে পরিবর্তিত হয়েছে।

দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের ছায়াতলে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য ইউক্রেন ইস্যুতে পক্ষ বেছে নেয়াই ছিল স্বাভাবিক। তবে তেমনটা ঘটছে না। রাশিয়ার সঙ্গে ক্রমশ জোরদার হতে থাকা সম্পর্ক বদলে দিয়েছে সমীকরণ।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে যখন পুরো পশ্চিমা বিশ্ব নিন্দা জানাচ্ছে, ঠিক সে সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ ধনবান গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো বলতে গেলে নিশ্চুপ।

মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন শক্তি, অর্থ ও নিরাপত্তা- এ তিনটি বিষয় জড়িত থাকায় তাদের এমন আচরণ স্বাভাবিক।

ফরাসি থিংকট্যাংক ইন্সতিতুত মন্তেই এর কন্ট্রিবিউটর ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ অ্যান গাদেল বলেন, ‘শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মস্কোর আর্থিক সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে তাই নয়, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সম্পর্কও জোরদার হচ্ছে।’

ইউক্রেন থেকে রাশিয়ান সৈন্য প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভোট দেয়নি চীন, ভারত ও আরব আমিরাত।

যুক্তরাষ্ট্র এবং আলবেনিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রস্তাবটি ১১টি দেশের সমর্থন পায়। স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া এর বিপক্ষে ভেটো দিয়েছে।

ভোটের পর আমিরাতের সরকারি সংবাদ সংস্থা ডব্লিউএএম জানায়, আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি’ নিয়ে ফোনে কথা বলেছেন। তবে ইউক্রেন সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হয়নি।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, আরব আমিরাত ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ‘বহুমুখী রাশিয়া-ইউএই সম্পর্ক সম্প্রসারণ’ নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার মস্কোতে বৈঠক করবেন।

বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের রাশিয়ার অভিযানের কয়েক ঘণ্টা আগেও মস্কোর সঙ্গে ‘গভীর বন্ধুত্বের’ ওপর জোর দেয় আরব আমিরাত।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশ সৌদি আরবও অভিযান নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। একই ভাবে বাহরাইন, ওমানও নিশ্চুপ। কুয়েত এবং কাতার শুধু সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে, তবে তারা মস্কোর সমালোচনা করেনি।

আদর্শগতভাবে মিত্র

বহুমাত্রিক দ্বন্দ্বে বিভাজিত মধ্যপ্রাচ্যে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ইরানের মতো সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় রাজতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে তারা কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের আক্রমণের পড়লেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ওয়াশিংটন এই অঞ্চলে তার সামরিক শক্তি সীমিত করতে শুরু করে।

ইরানপন্থি বিদ্রোহীরা ২০১৯ সালে সৌদির তেল কোম্পানি আরামকোতে আক্রমণ চালায়।

গাদেল বলেন, ‘তারা (মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো) বুঝতে পেরেছে, এই অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি প্রত্যাহারের ক্ষতি পূরণের জন্য তাদের জোটে বৈচিত্র্য আনতে হবে।’

এর পাশাপাশি রাজনীতিও প্রাধান্য পাচ্ছে।

আমেরিকান সৈন্যদের আতিথ্য দানকারী প্রধান দুই দেশ সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত। তবে অস্ত্র চুক্তি ও অধিকার ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা অম্ল-মধুর সম্পর্কে পরিবর্তিত হয়েছে।

২০০৮ সালে ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রিয়াদের সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হয়। আরব আমিরাত একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এ থারটি ফাইভ জেট ফাইটারের এক মেগা ডিল বাতিলের হুমকি দেয়।

কিংস কলেজ লন্ডনের সহযোগী অধ্যাপক ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, ‘আমেরিকার দেয়া মানবাধিকারের শর্তগুলো যখন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে তখন তারা রাশিয়াকে একটি আদর্শিক মিত্র হিসেবে দেখছে। এ অঞ্চলে মস্কো ও আবুধাবি একই ধরনের কৌশল গ্রহণ করছে। দুটি দেশই বিপ্লববিরোধী ও রাজনৈতিক ইসলামের পক্ষে।’

কূটনৈতিকভাবে জটিল অবস্থান

ক্রিগ মনে করেন, সিরিয়া ও লিবিয়া সংঘাতে সরাসরি জড়িত রাশিয়ার সঙ্গে জিসিসি রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতা সম্পর্ক জোরদার হলেও তারা এখনও নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।

তিনি বলেন, ‘তবে তারা আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের বৈচিত্র্য আনতে শুরু করেছে।’

সরকারি হিসাবে, রাশিয়া ও জিসিসি দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ২০১৬ সালের ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২১ সালে বেড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। এই বাণিজ্যের বেশিরভাগই আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের সঙ্গে।

আরব আমিরাত; বিশেষত দুবাইকে দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ান বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান ও রাশিয়ান অভিজাতদের ছুটির গন্তব্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জ্বালানি বাজারের বড় খেলোয়াড় হিসাবে বেশিরভাগ জিসিসি রাষ্ট্রের জ্বালানি উৎপাদক হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।

রিয়াদ ও মস্কো ওপেক প্লাস জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তেলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজনে এর উৎপাদন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।

থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো এলেন ওয়ালদ বলেন, ‘কূটনৈতিকভাবে ওপেকের সদস্যরা বেশ জটিল একটা অবস্থানে আছে, কারণ তেলের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা ওপেক প্লাস চুক্তি বজায় রাখাই এখন তাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাই সম্পর্কে টানাপড়েনের আশঙ্কায় রয়েছে ও তারা চায় রাশিয়া যেন ওপেক প্লাসের অংশ হিসেবে থাকে। রাশিয়া জোট ছেড়ে গেলে পুরো চুক্তিটাই বাতিল হয়ে যেতে পারে।’

কয়েকটি প্রধান তেল আমদানিকারক অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারীদের সরবরাহ বাড়ানোর ও দাম স্থিতিশীল করার আহ্বান জানালেও বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানিকারক রিয়াদ তাতে আগ্রহ দেখায়নি।

ওয়ালদ বলেন, ‘ইউক্রেনে-রাশিয়া কী করছে সেটা নিয়ে নীরব থাকার এটাই সম্ভবত তাদের জন্য সেরা সময়। তবে পশ্চিমা নেতারা চাপ প্রয়োগ করলে এই বাস্তববাদী অবস্থান হয়তো বেশিদিন টিকবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর