একটু পরেই ছেড়ে যাবে বাস। বিধ্বংসী রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমার আঘাত এড়াতে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেয়া হবে যাত্রীদের।
এই বাসে তুলে দিতেই কন্যাকে নিয়ে এসেছেন বাবা। ছোট্ট মেয়েটির কতইবা বয়স? চার অথবা পাঁচ বছর।
উলের গোলাপি জ্যাকেটে মোড়ানো কন্যার চোখভর্তি পানি, ডুকরে উঠছে কান্না। বাবার চোখ বেয়েও অশ্রুধারা।
এই বাসে বাবা যাচ্ছেন না, স্ত্রী-মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়ে হাতে তুলে নেবেন অস্ত্র। যুদ্ধ করবেন দেশের জন্য, প্রতিপক্ষ অসীম শক্তিধর রাশান সেনাবাহিনী।
সেই যুদ্ধশেষে প্রিয় কন্যার মুখ আর দেখবেন কি না, আদুরে মেয়ে আর কখনও পাবে কি না বাবার উষ্ণ স্পর্শ- জানা নেই কারও।
বিদায় বেলায় বাবা তাই সস্নেহে বুলিয়ে দেন কন্যার রেশম কোমল চুল, পর মুহূর্তেই ঠান্ডার কথা ভেবে মাথায় পরিয়ে দেন উলের টুপি।
মেয়ের ছোট দুটি হাত টেনে নিয়ে অভয় দেয়ার মাঝেই অঝোর কান্নায় ভরে যায় বাবার দুই চোখ। এতদিন কন্যা তার বুকে মুখ লুকালেও এই বিদায়পর্বে বাবা যেন ছোট্ট শিশু হয়ে যান। মেয়ের বুকে এবার তিনিই মুখ লুকান। স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেও দমকে কেঁদে ওঠেন।
সর্বশেষে দেখা যায়, বাসের জানালার ওপাশে বসে আছেন মা ও মেয়ে। আর সজল চোখে জানালায় হাত বোলাচ্ছেন বাবা। ছেড়ে যাচ্ছে বাস।
সব মিলিয়ে ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে টুইটারে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান শুরুর প্রথম দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয় ভিডিওটি। যুদ্ধের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে অসংখ্য মানুষ ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভালোবাসার এই ছবি।
নিউ নিউজ ইইউ নামের একটি মিডিয়া আউটলেট শুক্রবার প্রথম ভিডিওটি টুইটারে শেয়ার করে। ওই অ্যাকাউন্টেই ভিডিওটি দেখা হয়েছে ১৭ লাখ বারের চেয়ে বেশি। রি-টুইট হয়েছে ১২ হাজার বার।
নিউ নিউজ ইইউর ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ’একজন বাবা তার পরিবারকে নিরাপদ অঞ্চলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তিনি তার ছোট মেয়েকে বিদায় জানালেন এবং লড়াই করার জন্য পেছনে থেকে গেলেন।’
ইউক্রেনের ঠিক কোথায় ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বেশ কিছু শহর এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির রাজধানী কিয়েভও রয়েছে। কিছু অঞ্চল দখলও করে নিয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী।