আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সদ্য স্বাধীন হওয়া ইউক্রেন ছিল পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিশালী দেশ। সদ্য স্বাধীন দেশটিতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের হাজার হাজার পারমাণবিক বোমা ছিল।
কিন্তু ইউক্রেন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া ‘বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম’ চুক্তির আলোকে দেশটির নিরাপত্তা দেবে।
চুক্তি সইয়ের পর ২০০১ সালে ইউক্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়, তাদের দেশ থেকে পারমাণবিক ওয়ারহেড, আন্তমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ ভারী ও কৌশলগত অস্ত্র সরিয়ে নেয়া অথবা ধ্বংস করা হয়েছে। ২০০২ সালে দেশটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিস্তার প্রতিরোধ বিধিতেও স্বাক্ষর করে।
এখন ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে সেই চুক্তির বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মারিয়ানা বুডজেরিন ‘বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম’ নিয়ে কথা বলেছেন ‘অল থিংস কনসিডার’-এর সঙ্গে।
মারিয়ানা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলাই যায়, ইউক্রেনীয়রা তখন ঠিক জানতই না যে ‘বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম’ তাদের সুরক্ষা দিতে পারবে না। যে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার গ্যারান্টি তারা চেয়েছিল।
কিন্তু ইউক্রেনীয়দের ঠিকই সে সময় বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে সত্যিই গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। এটি ছিল রাষ্ট্রপ্রধানদের দ্বারা সই করা সর্বোচ্চ স্তর থেকে হওয়া একটি চুক্তি। যার অর্থ হলো, ইউক্রেন কখনোই কোনো হুমকির মধ্যে পড়বে না। আর হুমকির সম্মুখীন হলেও ইউক্রেন কখনোই একা নয়।
মারিয়ানা বুডজেরিন বলেন, ইউক্রেনের কাছে চুক্তিটি কোনো আশ্বাস হিসেবে নয়, রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় ভাষায় লেখা এ চুক্তিকে তারা দেখত নিরাপত্তার গ্যারান্টি হিসেবে। তাদের ধারণা ছিল, যেকোনো পরিস্থিতিতে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের বিপদে এগিয়ে আসবে। যদিও চুক্তি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ঠিক কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সাড়া দেবে তার কোনো রূপরেখা ছিল না।
তবে যা-ই হোক, ইউক্রেনীয়দের এখন নিজেদের প্রতারিত ভাবার সুযোগ আছে। কারণ নিরস্ত্রীকরণ না হলে তাদের এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি একটি নেতিবাচক বার্তা দেবে সেইসব দেশের প্রতি। যাদেরকে পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে কিংবা যারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চায়।
বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম শেষ অবধি ইউক্রেনের সুরক্ষা দিতে পারেনি। পুতিনের নির্দেশে দেশটিতে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দলে দলে দেশটি ত্যাগ করছে সেখানকার সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে রাজধানীতে ঢুকতে শুরু করেছে রুশ সেনারা।