বর্তমান ইউক্রেন পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে হ্যাকার গোষ্ঠী ‘অ্যানোনিমাস’ রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা এরই মধ্যে দাবি করেছে যে তাদের হামলায় রাশিয়ার বেশ কয়েকটি সরকারি ওয়েবসাইট ও সংবাদমাধ্যম আরটির ওয়েবসাইটও নিষ্ক্রিয় হয়েছে।
আরটির প্রতিবেদনে বলে হয়েছে, গ্রুপটির প্রতিনিধিত্ব করে এমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো থেকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অ্যানোনিমাস আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধের ডাক দেয় ও ইউক্রেনের সামরিক হামলার প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে কয়েক ডজন সাইট অকেজো করে।
রাশিয়ার সরকারের কিছু ওয়েবসাইট, দ্য ক্রেমলিন, দ্য ডুমা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও আরটিতে সাইবার হামলায় কিছু সাইটের গতি কমে গিয়েছিল ও কিছু সাইট দীর্ঘ সময়ের জন্য অফলাইনে চলে যায়।
শুধু রাশিয়া নয় অ্যানোনিমাসের সঙ্গে যুক্ত হ্যাকাররা এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইট, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ), ইসলামিক স্টেট, চার্চ অব সায়েন্টোলজির মতো প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য খবরের শিরোনাম হয়েছিল।
অ্যানোনিমাসের সঙ্গে যুক্ত হ্যাকাররা এর আগে মার্কিন সরকারি ওয়েবসাইট, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ), ওয়েস্টবোরো ব্যাপটিস্ট চার্চ, আইএসআইএস, চার্চ অফ সায়েন্টোলজি এবং এপিলেপসি ফাউন্ডেশন- যা ২০০৮ সালে ফ্ল্যাশিং স্ট্রোব দ্বারা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল - আরও অনেকের মধ্যে আক্রমণ করেছে৷
এদিকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে ইউক্রেনও। দেশটির সরকার বলছে, এবারের হামলা ‘সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রায়’।
এর আগে পুতিনের সামরিক অভিযান ঘোষণার আগেই বুধবার বেশ কয়েকটি ইউক্রেনীয় ব্যাংক ও সরকারি বিভিন্ন বিভাগের ওয়েবসাইটগুলো সাইবার হামলায় অকেজো হয়ে যায়। ইউক্রেনের অভিযোগ, রাশিয়া থেকেই সাইবার হামলা চালানো হচ্ছে।
ইন্টারনেট সংযোগ কোম্পানি নেটব্লক্স বলছে, ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে ডিডিওএস আক্রমণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।
ডিডিওএস অ্যাটাক করা হয় সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানে বাধা প্রদান করার জন্য। এই আক্রমণের ফলে কোনো ওয়েবসাইট কিংবা সার্ভারকে সাময়িক সময়ের জন্য কিংবা অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
নেটব্লক্স জানিয়েছে, বুধবার বিকেল থেকেই ইউক্রেনের ওয়েবসাইটগুলোতে ডিডিওএস আক্রমণ শুরু হয়। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণের মাত্রা তীব্র হতে থাকে।
একজন গবেষক জানিয়েছেন, ‘আজকের সাইবার আক্রমণের পরেও সামরিক ও ব্যাংকিং ওয়েবসাইটগুলোকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করা গেছে কারণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে।’
এর পরেও আক্রমণ চলছেই। এখনো সিকিউরিটি সার্ভিসের ওয়েবসাইটে সমস্যা রয়েই গেছে। যা ঘটনার তীব্রতা স্পষ্ট করছে।
গত সপ্তাহে একই রকম হামলায় ইউক্রেনের অল্পসংখ্যক ওয়েবসাইট অফলাইনে চলে যায়।
ইউক্রেনের মিত্র দেশ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, ক্রেমলিনের সরাসরি নির্দেশে রাশিয়ার হ্যাকাররা ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে।
তবে মস্কো হ্যাকিংসংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
গত জানুয়ারিতে ইউক্রেন অভিযোগ করে, রাশিয়া তাদের ৭০টি ওয়েবসাইটে হামলা চালিয়েছে। এ সময় কিছু ওয়েবসাইট হ্যাক করে লিখে দেয়া হয়, ‘সবচেয়ে খারাপের জন্য প্রস্তুত হও’।