বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কী চাইছেন পুতিন

  •    
  • ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:২৮

ন্যাটোয় ইউক্রেনের যোগদানকে রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের হুমকি বলছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাই ইউক্রেনকে পশ্চিম জোটে ভিড়তে দেবে না মস্কো। এ ছাড়া পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক মহড়া বন্ধের পাশাপাশি পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহার চায় ক্রেমলিন।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার আগে ইউক্রেনের স্বাধীনতার জোরালো কোনো দাবি ছিল না। নব্বইয়ের দশকে রাশিয়া যেসব দেশকে তাদের বলয় থেকে স্বাধীন হওয়ার সুযোগ করে দেয়, তার মধ্যে ইউক্রেন প্রতিদ্বন্দ্বী জোট ন্যাটোর সদস্য হবে- এটা কোনোভাবে মেনে নিতে রাজি নন রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন।

চার মাস ধরে ধীরে ধীরে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েনের একপর্যায়ে চলতি মাসে প্রত্যাহারের খবরও আসে। এ খবরটি ন্যাটোর সদস্য পশ্চিমা-দুনিয়ায় কেবল নয়, শান্তিকামী মানুষের স্বস্তি দেয় অনেকটাই। তবে আসলে প্রত্যাহারের খবরটি সঠিক ছিল না, সেটি ছিল পুতিনের এক কূটনৈতিক চাল। আর সেই চাল খেলার দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক শক্তির দেশটি অভিযান শুরু করে দিয়েছে ইউক্রেনে।

প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিন কোথায় গিয়ে থামবেন? তার মনের কোণের আসল ইচ্ছাটাইবা কী?

ইউক্রেনের সামরিক শক্তি বিশ্বের ২২তম। সেই হিসাবে যুদ্ধ জমার কথা নয়। তবে জাতিসংঘ আর বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকা, পরাশক্তি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ইউরোপের প্রধান শক্তিগুলো প্রকাশ্যেই ইউক্রেনের পক্ষে। এ কারণে বিষয়টি কেবল রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, এমন শঙ্কা রয়েছে। আর দুই পক্ষে বিশ্বের সেরা সামরিক শক্তিগুলো যদি অবস্থান নেয়, তাহলে পরিণতি আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে কি না, এ নিয়েও আছে আলোচনা।

আরেক প্রশ্ন হচ্ছে পুতিন ইউক্রেনেই থামবেন কি না। এ দেশটির প্রতিবেশী বেলারুশ স্পষ্টতই মস্কোপন্থি। পূর্ব ইউরোপেও রাশিয়ার আধিপত্য এখনও একচ্ছত্র। ফলে সেখানে একই ধরনের পদক্ষেপ হয়তো দরকার পড়বে না। তবে পুতিনের ন্যাটো থেকে ইউক্রেনকে দূরে রাখতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে রুশ প্রভাব বলয়ে থাকা দেশগুলো যেন কখনও ন্যাটোয় যোগ দেয়ার চিন্তা না করে, সেটিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন।

ন্যাটো হলো পশ্চিম ইউরোপের সামরিক জোট, যার সদস্য যুক্তরাষ্ট্রও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এর জন্ম, যাকে রাশিয়া কখনও ভালোভাবে দেখেনি। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার আর্থিক পরিস্থিতির কারণে সরাসরি সংঘাত বা বিরোধে জড়াবে, এমন পরিস্থিতি ছিল না দেশটির জন্য। পুতিনের শাসনামলে রুশ অর্থনীতি ফুলেফঁপে ওঠার পর কমিউনিস্ট রাশিয়ার আমলের প্রভাব তিনি ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন প্রকাশ্যেই।

সমর বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো কারণে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর লড়াই বাধলে ইউক্রেনের ভৌগোলিক সহায়তা পেতে চায় পশ্চিমা বিশ্ব। পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়ায় ন্যাটো অবস্থান থেকে ক্রেমলিন আগেই এ ধারণা পেয়েছে। তাই সীমান্তঘেঁষা ইউক্রেনের ন্যাটোয় ঢুকতে না দেয়ার বিষয়ে অনড় মস্কো।

আমেরিকার সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনান্ড ট্রাম্পের সময় থেকেই দেশটির প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধ চরমে। আমেরিকার গোয়েন্দাদের দাবি, ট্রাম্পকে ক্ষমতায় আনার পেছনে মূল কারিগর ক্রেমলিন।

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ক্ষমতায় এসেই পূর্ব ইউরোপে নজর দেন। রাশিয়ার আশপাশের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো সম্প্রতি সামরিক মহড়াও শুরু করে জোরেশোরে। ইউক্রেনকে দলে ভেড়াতেও চলছে জোর তৎপরতা। এতে সম্মতি আছে ইউক্রেনেরও।

আর এখানেই আপত্তি রাশিয়ার। তাদের অভিযোগ, ন্যাটো জোটে ইউক্রেনের যোগ দেয়া রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। এ ছাড়া সীমান্তের কাছে ন্যাটোর সামরিক মহড়ায় উদ্বিগ্ন মস্কো।

পাল্টা ব্যবস্থা নেয় রাশিয়া। সীমান্তে সেনা মোতায়েন শুরু করে তারা। ক্রেমলিন শর্ত দেয়, ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে পশ্চিমাদের। সেই সঙ্গে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক মহড়া বন্ধের পাশাপাশি পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার কাছাকাছি কোনো দেশে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা যাবে না।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগ পর্যন্ত ইউরোপের এই দেশগুলোয় বাম ধ্যান-ধারণা ছিল প্রবল। ফলে তারা রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলত, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তারা চলে যায় পুঁজিবাদী ইউরোপ-আমেরিকার বলয়ে।

রাশিয়ার এসব দাবির মধ্যে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার দাবি ছাড়া বাকি ইস্যুগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর কথা বলছে হোয়াইট হাউস। কূটনৈতিক চেষ্টা চালায় ইউরোপও।

কিন্তু এসব আলাপে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না পুতিন। পশ্চিমাদের আচরণ তার কাছে স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন সাবেক কেজিবি প্রধান।

এ বিভাগের আরো খবর