পশ্চিমাশক্তির জোট ন্যাটোর সহযোগী দেশ ইউক্রেনের রাজধানীসহ মূল ভূখণ্ডে বৈশ্বিক পরাশক্তি রাশিয়ার সামরিক হামলার প্রতিবাদে কেবল বিবৃতি দিয়েই দায় এড়াল সামরিক ও রাজনৈতিক এই জোট।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হামলার ঘোষণার পরপরই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, সীমান্ত ও বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে রাশিয়া।
রুশ হামলার পর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক জোট ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন স্টোলেনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাশিয়ার বেপরোয়া ও বিনা উসকানিতে এমন হামলা অসংখ্যা নিরপরাধ ও নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের জীবন ভয়াবহ ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কূটনৈতিক আলোচনা এড়িয়ে রাশিয়া সরাসরি আগ্রাসন চালিয়েছে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ ইউক্রেনের ওপর।’
গত সোমবারের বিবৃতিতে ন্যাটোর এই প্রতিনিধি রুশ আধিপত্য রুখে দিতে ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিমে যুদ্ধসেনা মোতায়েনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার মস্কোর সামরিক হামলা শুরু হলে কার্যত আর কোনো পদক্ষেপের কথা আসেনি এই সামরিক ও রাজনৈতিক জোটের শীর্ষ নেতার কাছ থেকে।
এই হামলার মূলে রয়েছে ৩০ দেশের সামরিক জোট ন্যাটোতে পূর্ণ সদস্য হিসেবে ইউক্রেনের সংযুক্তিকে ঠেকানো। রাশিয়া শুরু থেকেই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটভুক্ত হওয়ার বিরোধিতা করছে।
গত দুই দশক ন্যাটো চাইছে ইউক্রেন, জর্জিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে সদস্যপদ দিয়ে ওই অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্যকে ঠেকাতে।
রুশ হামলাকে ন্যক্কারজনক ও বিনা উসকানিতে সামরিক হামলা উল্লেখ করে ন্যাটোর অন্যতম সদস্যদেশ ও বৈশ্বিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশ প্রতিরোধের হুমকি দেয়।
ন্যাটো-ইউক্রেন ঘনিষ্ঠতা
ইউক্রেনকে ২০০৮ সালে ন্যাটোভুক্ত সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে সেই সময় মস্কোপন্থি দেশটির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ সেই ডাকে সাড়া দেননি।
ক্ষমতা থেকে ভিক্টরের উৎখাত ও ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির পর সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী আরসেনিই ইয়াতসেনুক।
ন্যাটোভুক্ত হওয়ার পক্ষে ২০১৭ সালে দেশটির পার্লামেন্টে আইন পাস হয়।
২০২০ সালে ন্যাটো জোটের সহযোগী সদস্যপদ দেয়া হয় ইউক্রেনকে। এতে করে পূর্ণ সদস্য পদ পাওয়ার যাত্রায় আরও এগিয়ে যায় কিয়েভ।
দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমার জেলেনস্কি চলতি মাসে বলেন ন্যাটোর সদস্য পাওয়ার বিষয়টি দেশটির সাংবিধানিক অধিকার।
পুতিনের হুঁশিয়ারি
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
পুতিন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্র ত্যাগ করে ঘরে ফিরে যেতে বলেছেন। যেকোনো রক্তপাতের জন্য ইউক্রেন সরকারই দায়ী থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া পুতিন বলেছেন, তার বিশ্বাস আছে রুশ সেনারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করবেন।
পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ন্যাটো যদি কোনো ধরনের বাধা তৈরি করে তবে কাউকে ছাড় দেবে না মস্কো।
পুতিনের এমন হামলা ও হুঁশিয়ারির মুখে খেই হারিয়ে ফেলেছে ন্যাটো জোট।