কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা চলছে। রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা পুতিনের নেয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করছেন। যদিও হোয়াইট হাউস মঙ্গলবার রাশিয়ার কর্মকান্ডকে ‘আক্রমণ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রশংসাই করলেন, একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় থাকলে অর্থাৎ ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকলে এমনটা হতো না- এমনটাই জানা গেছে ভেনিটি ফেয়ারের এক প্রতিবেদনে।
একটি রেডিও অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, হোয়াইট হাউস বলছে এটি একটি ‘আক্রমণ’, যা একটি শক্তিশালী শব্দ। এখানে ভুল কী হয়েছে? বাইডেন আসলে কী করেছেন, যা তিনি অন্যভাবে করতে পারতেন?
স্বাভাবিকভাবেই এর জবাবে ট্রাম্পের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল ২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে। তিনি বলেন, ‘যা ভুল হয়েছে তা হলো একটি কারচুপির নির্বাচন এবং যা ভুল হয়েছে তা হলো ওভাল অফিসে এমন একজন আছে যেখানে তার থাকা উচিত নয় এবং এমন একজন ব্যক্তি তিনি, যার কোনো ধারণাই নাই তিনি কী করছেন?’
এ ছাড়া পুতিনের কৌশলগত প্রতিভার জন্য ট্রাম্প তার প্রশংসাও করেছেন। যদিও প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থাতেও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে পুতিনের প্রশংসা করতেন।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি টেলিভিশন স্ক্রিনে দেখেছেন ইউক্রেনের একটি বড় অংশকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন পুতিন। তিনি একে খুবই বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নেয়া পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
তিনি জানিয়েছেন, এখন পুতিন পূর্ব ইউরোপের শান্তিরক্ষী হবেন ও সেখানে সেনা পাঠাবেন। তিনি কর্মকাণ্ডের সমালোচনা না করে বরঞ্চ বলেছেন, পুতিনের এই পদ্ধতিকে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের দক্ষিণ সীমান্তে ব্যবহার করতে পারে।
পুতিনকে তিনি বেশ ভালোভাবে চেনেন এবং ইউক্রেন নিয়ে তার নেয়া প্রতিটি পদক্ষেপ বেশ বুদ্ধিদীপ্ত, এমনটাই বলেন ট্রাম্প। এ ছাড়া তার বক্তব্যে পুতিন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিভাবান’, ‘অসাধারণ’, ‘খুবই বুদ্ধিমান।’
এদিকে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ অধ্যুষিত ইউক্রেনের দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পূর্ব ইউক্রেনে ‘শান্তি বজায় রাখতে’ সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়ার এ কর্মকাণ্ডে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘোষণাটি ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিনা প্ররোচনায় লঙ্ঘন’ এবং এ ঘটনায় জাতিসংঘ ইউক্রেনের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ডাককেও সমর্থন করেছে দেশটি।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘শক্তিশালী ও কার্যকর’ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। সর্বশেষ জাপানও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যখন ইউরোপে ক্রমবর্ধমান যুদ্ধ ঝুঁকি, ইউরোপীয় অঞ্চলে জ্বালানি সংকট বিশ্বজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে যখন পশ্চিমা অধিকাংশ দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, ঠিক সেই সময়ই ইমরান খান ও পুতিনের বৈঠক হতে যাচ্ছে।
এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের মূল ভূখণ্ডে যুক্ত করে রাশিয়া। সে সময় থেকেই পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাত চলছে। ইউক্রেন সেনা ও মস্কো সমর্থিত বিদ্রোহীদের সংঘাতে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।