ইউক্রেন নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য একে অপরকে দায়ী করলেও দুই দেশই নিজেদের মধ্যে কোনো সংঘাত চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, ক্রিমিয়া ইস্যুতে নিজের নাগরিকদের উদ্ধারেও সেনা পাঠাতে চায় না দেশটি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যদি একে অপরকে গুলি করতে শুরু করে তবে তা হবে বিশ্বযুদ্ধ।
আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও গবেষকরা আগে থেকেই বোঝার চেষ্টা করে আসছেন, ঠিক কী হবে যদি দুই দেশ পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
২০১৯ সালে ইনডিপেনডেন্ট ইউকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সায়েন্স অ্যান্ড গ্লোবাল সিকিউরিট প্রোগ্রামের (এসজিএস) আওতায় এক গবেষণায় সিম্যুলেশন কাজে লাগিয়ে দেখতে পেয়েছেন, ন্যাটো ও রাশিয়ার সর্বাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধে প্রথম ঘণ্টায়ই প্রাণ হারাবে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ এবং আহত হবে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ। তবে তেজস্ক্রিয় বিকিরণে অসুস্থ হওয়া কিংবা মৃত্যুবরণ করা, দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাবের কারণে মারা যাওয়াকে এর মধ্যে বিবেচনা করা হয়নি।
এসজিএস দাবি করেছে, তাদের গবেষণা বাস্তব নিউক্লিয় সক্ষমতা, লক্ষ্য ও মৃত্যুর অনুমানের ওপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে। তাদের বানানো সিম্যুলেশনের ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথম পারমাণবিক বোমাটি পোল্যান্ডের ভেতরে রকলা নামক শহরে বিস্ফোরণ ঘটায়। যে শহরটি চেক প্রজাতন্ত্র ও জার্মানির সীমান্তের কাছে অবস্থিত।
ইনডিপেনডেন্ট ইউকের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই মডেলে এমন কোনো পরিস্থিতি আছে কি না, যেখানে ন্যাটো প্রথম পারমাণবিক হামলার সূত্রপাত করবে।
এজিএস প্রোগ্রামের একজন পদার্থবিজ্ঞানী জিয়া মিয়ান জানিয়েছেন, এই সিম্যুলেশনটি প্রচলিত ন্যাটো-রাশিয়া যুদ্ধের ভিত্তিতে তৈরি। যেখানে রাশিয়া তার পারমাণবিক নীতি অনুসারে আগে হামলা শুরু করেছে।
এই গবেষণার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ ও যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল।
তবে রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক স্যাম ডুডিন, সিম্যুলেশনের ফলাফলের বিষয়ে একমত হতে পারেননি। তিনি বলেন, এ ধরনের পারমাণবিক যুদ্ধ আসলে হতেই পারে না। কারণ ১৯৫০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিই হলো রাশিয়ার সঙ্গে প্রচলিত যুদ্ধ এড়িয়ে চলা। মস্কোও ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধ চায় না।
ডুডিন আরও বলেন, যদি অপারেশনাল দিক থেকে বিচার করা হয়, তাও সিম্যুলেশন দেখে মনে হচ্ছে, ইউরোপ থেকে সমন্বিত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেশ থেকে উধাও হয়ে গেছে। বিমান থেকে শুরু করা পারমাণবিক হামলার ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এ ছাড়া সিম্যুলেশনে হতাহতের হিসাবও কম বলে মনে হয়েছে ডুডিনের কাছে।