বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা না নেয়ায় চাকরি হারাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের প্রায় তিন হাজার কর্মী।
গত শুক্রবারের মধ্যে এসব কর্মীদের টিকা নিতে বলেছিল নিউ ইয়র্ক শহর কর্তৃপক্ষ।
নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র জানিয়েছেন, টিকা নেয়ার নিয়ম তিনি পাল্টাবেন না।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাকরিচ্যুত হতে যাওয়াদের মধ্যে আছেন শিক্ষক ও অগ্নিনির্বাপক কর্মী। এ ছাড়া নিউ ইয়র্ক শহরের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীও রয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক শহরে গত বছর করোনার টিকা নেয়ার নিয়ম চালু করা হয়।
শহরের ৯৫ শতাংশের বেশি চাকরিজীবী টিকা নিয়েছেন। তবে কিছু অংশ বলছেন, টিকার বাধ্যবাধকতা তাদের ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন হচ্ছে। এ কারণে তারা টিকা নেয়ার নিয়ম মানছেন না।
টিকার নিয়ম চালুর পর থেকেই তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
চাকরিচ্যুতির এ ঘটনায় বড় ধরনের বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছেন বিরোধীরা। পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও নিয়েছেন তারা।
এদিকে নিউ ইয়র্ক মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, সিটি কর্তৃপক্ষ কর্মীদের বরখাস্ত করছে তা নয়, বরং কর্মীরা নিয়ম না মেনে ‘পদত্যাগ’ করছেন।
টিকার নেয়ার নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকে এই ৩ হাজার টিকাহীনদের মধ্যে অনেকেই অবৈতনিক ছুটিতে রয়েছেন। নিয়ম চালুর পর প্রায় এক হাজার কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তবে তারা টিকা দেবেন বলে সম্মত হয়েছিলেন। তারা যদি শুক্রবারের মধ্যে টিকা দেয়ার প্রমাণ জমা দিতে ব্যর্থ হন তবে তাদের পদ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।
নিউ ইয়র্কের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক বনি স্কালা কিলাডাইটিস। তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতার যুক্তি দেখিয়ে চারবার টিকার নিয়ম থেকে ছাড় পাওয়ার আবেদন করেছেন। তবে তার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও জানা যায়নি।
৪৯ বছর বয়সী বনি স্কালা বলেন, ‘টিকা না নেয়ার সিদ্ধান্ত মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি এখন পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী। টিকা না নেয়ার কারণে যদি আমার শিক্ষকতা পেশায় আর ফেরা না হয়, তবে বলব, তাই হোক। তবে আমার পদত্যাগ করার ইচ্ছা নেই।’
২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন নিউ ইয়র্ক শহরের বাসিন্দারা।
শুরু থেকেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা টিকা নেয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। তারা বলছেন, টিকা নেয়াই করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষার সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
টিকা আবিষ্কারের পর নিউ ইয়র্কের পাশাপাশি সান ফ্রান্সিসকো, বোস্টন ও শিকাগোর মতো বড় শহর কিংবা রাজ্যগুলোয় টিকা নেয়ার ওপর জোর দেয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বাসরত প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ টিকা নিয়েছেন। আর নিউইয়র্ক শহরের ৮৫ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে।
এদিকে টিকা নিতে চান না এমন মানুষের সংখ্যাও নিউ ইয়র্ক শহরে কম নয়। সেখানকার প্রায় ১৩ হাজার মানুষ বাধ্যতামূলক টিকার নিয়ম থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেছিলেন। আবেদনকারীদের প্রায় অর্ধেকের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। বাকি অর্ধেকের মধ্য থেকেই তিন হাজার কর্মী এবার চাকরিচ্যুত হতে চলেছেন।