বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউক্রেন যুদ্ধের শঙ্কায় তেলের দাম আট বছরে সর্বোচ্চ

  •    
  • ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২১:১৩

আমেরিকাভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক এবং আর্থিক সেবা হোল্ডিং সংস্থা- জেপি মরগান বলছে, এই বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১২৫ ডলারে গিয়ে পৌঁছেতে পারে। ২০২৩ সালে ১৫০ ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে।

করোনা মহামারি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তির দিকে ছিল। তার ওপর ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধের দামামায় আরও চড়েছে এই জ্বালানির দর। তীব্র উত্তেজনার মধ্যে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ৯৫ ডলারে উঠেছে, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ। এতে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ ডলার ৮৮ সেন্ট। আর ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ফিউচারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ ডলার ৯০ সেন্ট।

বাংলাদেশ সরকার গত ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নেয়, সে সময়ের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এখন ১০ ডলার বেশি।

তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল তেলের দর ছিল ৮৫ ডলারের মতো।

ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। মিত্র দেশ বেলারুশের সঙ্গে চালাচ্ছে সামরিক মহড়া। ব্ল্যাক সিতে দেখা গেছে দেশটির নৌবাহিনীর শক্ত অবস্থান। ইউক্রেনকে কার্যত ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া।

এমন পরিস্থিতিতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ ও গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ইউক্রেনে হামলার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে রাশিয়া। হামলা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ সীমান্তে জড়ো করেছে দেশটি। আকাশপথে কিয়েভ শহরে দ্রুত হামলা চালানোর আশঙ্কা আছে এবং আগামী সপ্তাহে শীতকালীন বেইজিং অলিম্পিক গেম শেষ হওয়ার আগেই তা শুরু হতে পারে।

রয়টার্স বলেছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে আট বছরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থান করছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধের দামামা। রাশিয়া একটি শীর্ষ জ্বালানি তেল উৎপাদক দেশ। রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের জোর প্রস্তুতির কারণে উদ্বেগ বাড়িয়েছে; জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক অপরিশোধিত সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে। দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।

রাশিয়া একটি বড় আক্রমণ শুরু করার জন্য ইউক্রেনের কাছে যথেষ্ট সৈন্য সংগ্রহ করেছে। ওয়াশিংটন ইউক্রেনে অবস্থানরত সব মার্কিন নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশে ফিরে আসার যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ব্রিটেনও তার নাগরিকদের ইউক্রেন ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে।

সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ব জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শেষ পর্যন্ত দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে- তা নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

হিউস্টনে লিপো অয়েল অ্যাসোসিয়েটসের সভাপতি অ্যান্ড্রু লিপো বলেছেন, ‘যদি সত্যিই রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণটা করে। তাহলে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেল সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটবে। সেক্ষেত্রে জ্বালানি তেলের দাম আরও বেড়ে যাবে-এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।’

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনের রাজনৈতিক সংকটকে। এই উত্তেজনায় জড়িয়েছে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো। ওই সীমান্ত এলাকায় রাশিয়া যেমন যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করছে, তেমনি ইউক্রেনকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে ন্যাটো বাহিনী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন অবস্থায় জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া। কেননা জ্বালানির জন্য পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের দেশগুলো মস্কোর ওপর নির্ভরশীল।

তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মনোবল ধরে রাখতে ইউরোপের দেশগুলোকে আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সরকার থেকে বলা হচ্ছে, মস্কো তেল ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে এর বিকল্প ব্যবস্থা করবে ওয়াশিংটন।

কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বাইডেন প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে আক্রমণ করলে রাশিয়ার জন্য কঠিন অবরোধ অপেক্ষা করছে। কিন্তু এসব হুমকি পাত্তা দিচ্ছে না রাশিয়া।

বরং ধীরে ধীরে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়াচ্ছে দেশটি। ইউক্রেনের পাশাপাশি বেলারুশের ভেতরও যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে মস্কো। অনেকের ধারণা, যুদ্ধ শুরু হলে উত্তর দিক থেকে আক্রমণে যেতে পারে রাশিয়ান বাহিনী।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অন্যতম সরবরাহকারী হওয়ায় চলমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া ইউরোপকে জ্বালানি সংকটে ফেলতে পারে বলে জোর ধারণা। তাই হলে আসছে দিনগুলোতে আরও বেড়ে যেতে পারে তেল ও গ্যাসের দাম।

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ কোম্পানি ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্স জানুয়ারির শেষেল দিকে পূর্বাভাস দিয়েছে, তেলের দাম ১০০ ডলারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই বছরের মাঝামাঝি সময়েই এই দাম ছাড়িয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে আমেরিকাভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক এবং আর্থিক সেবা হোল্ডিং সংস্থা- জেপি মরগান বলছে, এই বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১২৫ ডলারে গিয়ে পৌঁছেতে পারে। ২০২৩ সালে ১৫০ ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম কমতে কমতে ৬৬ ডলারে নেমে গিয়েছিল। ব্রেন্ট তেলের দর কমে হয়েছিল ৬৮ ডলার।

তিন-চার দিন ওই একই জায়গায় স্থির ছিল তেলের বাজার। কিন্তু ওমিক্রন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও করোনার নতুন ওই ধরনে আক্রান্ত হয়ে মানুষ খুব একটা মারা না যাওয়ায় এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক কেটে যায়।

এতে বিশ্বে তেলের চাহিদা বাড়বে- এ সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আবার বাড়তে শুরু করে দাম। সেই ঊর্ধ্বগতি এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দর।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে প্রতি ব্যারেল ৪৯ ডলার।

এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবর মাসে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছিল, শিগগিরই তা ১০০ ডলার হয়ে যেতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর