বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অধিকারের লড়াইয়ে থামবেন না মুসকান

  •    
  • ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:১৫

মুসকান বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছি না। আমি আমার অধিকারের জন্য লড়ছি। আমার শিক্ষার জন্য লড়ছি। বহু বছর ধরে আমরা হিজাব পরে আসছি। এটা খুলে ফেলতে বলার অধিকার কারও নেই।’

ভারতের কর্ণাটকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাবের বিরুদ্ধে গেরুয়া উত্তরীয়ধারীদের হিংস্রতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন বিবি মুসকান খান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মঙ্গলবার ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, গেরুয়াধারীরা ‘জয় শ্রী-রাম’ স্লোগান দিয়ে উত্যক্ত করার মাঝেই মুসকান আকাশে হাত উঁচিয়ে পাল্টা আল্লাহু আকবার স্লোগান দিচ্ছেন। মুসলিম নারীদের হিজাব পরে ক্লাসে অংশ নেয়ার অনুমতির দাবিতে যারা সোচ্চার তাদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছেন মুসকান।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টকে বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে মুসকান বলেছেন, ওই ঘটনার পর তিনি আরও সাহসী হয়েছেন।

‘আমাদের ভয় পেলে চলবে না। ভয় পাওয়ার আর কোনো কারণ নেই।’

ফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুসকান বলেন, ‘যখন শুনেছি আমার কারণে অনেক মুসলিম মেয়ে এখন তাদের অধিকারের জন্য সোচ্চার হচ্ছে তখন মনোবল আরও বেড়ে গেছে। সবাই যেভাবে সমর্থন করছেন তাতে আমি খুবই খুশি।’

কর্ণাটক রাজ্যের মান্ডিয়ায় মুসকান এখন একজন সেলেব্রিটিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর লোকজন তার বাড়িতে যাচ্ছেন। দৃশ্যত ভয়ংকর পরিস্থিতিতে একা দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করায় তার সাহসের প্রশংসা করছেন সবাই। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুসলিম সংগঠনগুলোও তাকে সমর্থন করছে।

মুসকান বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছি না। আমি আমার অধিকারের জন্য লড়ছি। আমার শিক্ষার জন্য লড়ছি। বহু বছর ধরে আমরা হিজাব পরে আসছি। এটা খুলে ফেলতে বলার অধিকার কারও নেই।’

মঙ্গলবার কী হয়েছিল

ওইদিন মুসকান প্রতিদিনের মতোই হিজাব ও বোরকা পরে তার কলেজে যান। তবে একদল ব্যক্তি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, বোরকা ও হিজাব খুলে তাকে কলেজে প্রবেশ করতে হবে।

মুসকান বলেন, “আমি তাদের কথায় পাত্তা না দিয়েই কলেজে ঢুকি। এরপর আরেকটি দল আমাকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে উত্যক্ত করা শুরু করে। তারা আমাকে বোরকা ও হিজাব খুলে ফেলতে বলে, তা না হলে নাকি আমি নিজের কলেজে ঢুকতে পারব না। সে সময় আমি তাদের স্লোগানের জবাবে আমি ‘আল্লাহু আকবর’ বলে পাল্টা স্লোগান দিই।”

মুসকান জানান, উত্যক্তকারীরের বেশিরভাগই কলেজের কেউ নন। তিনি বলেন, ‘তারা বহিরাগত ছিলেন। আমি কাউকে চিনতে পারিনি।’

শিক্ষকেরা পাশে আছেন

মান্ডিয়ার পিইএস কলেজ অফ আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড কমার্সে বাণিজ্য নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন মুসকান। কলেজের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

মুসকান বলেন, ‘আমার অধ্যক্ষ আমার সঙ্গে আছেন, আমার শিক্ষকেরা আছেন। কেউ কখনোই আমাকে হিজাব খুলে ফেলতে বলেননি। তারা আমাকে স্বাভাবিকভাবেই কলেজে আসতে বলেছেন। তারা আমাকে সুরক্ষা দিচ্ছেন।’

প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর হিসেবে অন্যদের অনুপ্রাণিত করলেও মুসকানের দাবি, তিনি শুধু নিজের সংস্কৃতি অনুসরণ করছেন।

মুসকান বলেন, ‘কলেজ শিক্ষা সবার জন্য। আমাকে হিজাব খুলতে বলার অধিকার কারও নেই। মুসলিম নারী হিসেবে হিজাবকে আমি প্রাধান্য দিই। তারা (অন্য ধর্মের অনুসারী) তাদের সংস্কৃতি অনুসরণ করে, আমরা আমাদেরটা করি।’

চলমান বিতর্কের সূত্রপাত গত ডিসেম্বরে, যখন উদুপি উইমেন্স প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের মুসলিম ছাত্রীরা মাথার ওড়না/স্কার্ফ খুলে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। এরপর গেরুয়া উত্তরীয়ধারী হিন্দুদের কর্মসূচির কারণে অনেক স্কুল-কলেজ ছাত্রীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে।

কর্ণাটক রাজ্য সরকার গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘সাম্য, অখণ্ডতা এবং জনসাধারণের আইন-শৃঙ্খলা ব্যাহত করে’ এমন পোশাক পরে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং স্কুল-কলেজের জন্য ড্রেস কোড নির্ধারণ করে দেয়।

চলতি সপ্তাহে বিষয়টি কর্ণাটক হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। তবে আদালত বুধবার পর্যন্ত কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ দেয়নি, তারা মামলাটিকে একটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর