যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি শেষ করেছে রাশিয়া। ১০ দিনের এই মহড়া শুরু হবে বৃহস্পতিবার।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য রাশিয়া যে প্রস্তুত, তা জানান দেয়ার জন্যই এই মহড়া।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই বেলারুশে রুশ সেনা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন শুরু করে ক্রেমলিন। ‘অ্যালিড রিসলভড’ নামের এই মহড়ায় অন্তত ৩০ হাজার সেনা অংশ নেয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।
দুই ব্যাটালিয়ন ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১২ সুখোই সু-৩৫ ফাইটার জেটও মহড়ায় যুক্ত করেছে মস্কো। এর আগে ইউক্রেন সীমান্তে লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করে রাশিয়া।
এ ঘটনাকে স্নায়ুযুদ্ধের পর বেলারুশে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় মোতায়েন বলছে পশ্চিমাদের সামরিক জোট- ন্যাটো। ইউক্রেন আক্রমণের জন্য ন্যাটোভুক্ত বেলারুশের আকাশ এবং স্থলপথে হামলার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই মহড়াকে সত্যিকারের যুদ্ধ বা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। কারণ বেলারুশের যে অংশে মহড়া হবে, সেখান থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে কিয়েভ অবস্থিত।
২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া উপত্যকা দখলের সময়ও এমন মহড়ায় দেখা গিয়েছিল রুশ সেনাদের।
বিশেষজ্ঞরা আল জাজিরাকে জানান, মহড়া চলাকালীন ইউক্রেন আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে বিবদমানদের একটি ভুলের মাশুল ডেকে আনতে পারে যুদ্ধ।
সাবেক ইউক্রেনীয় কূটনীতিক এবং সেন্টার ফর ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজিসের নিরাপত্তা নীতি বিশেষজ্ঞ আলেকজান্ডার খারা বলছেন, ‘সামরিক উপস্থিতির লক্ষ্য পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়াকে পশ্চিম দিক থেকে ও ইউক্রেনকে উত্তর অঞ্চলের দিক থেকে হুমকি দেয়া। আসলে রাশিয়া যে বার্তাটি দিতে চাচ্ছে, তা হলো তারা এমন একটি অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম, যার মাধ্যমে কিয়েভ দখল করা সম্ভব।
‘আমরা কী ক্ষমতা প্রয়োগ করি এবং প্রতিক্রিয়া কী দেখাই তা জানার জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে ক্রেমলিন। এটি স্পষ্ট যে প্রেসিডেন্ট পুতিনের দাবি মানা না হলে ইউক্রেনে সামরিক শক্তি প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে ক্রেমলিনের।
কেন চটেছে রাশিয়া
গত মাসে পশ্চিমাদের কাছে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কিছু দাবি জানায় মস্কো। এগুলো হলো:
- ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত হতে দেয়া যাবে না।
- পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক মহড়া বন্ধের পাশাপাশি পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
- রাশিয়ার কাছাকাছি কোনো দেশে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর জবাব
ওয়াশিংটন বলছে, ইউক্রেন তার মিত্র বাছাইয়ের অধিকার রাখে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনসহ বাকি বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।
সীমান্তের কয়েক কিলোমিটার দূরে রুশ সামরিক সরঞ্জাম
স্যাটেলাইটের ছবিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে রুশ যুদ্ধাস্ত্রগুলো দেখা গেছে। এসবের মধ্যে আছে ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট লঞ্চার, জঙ্গি বিমান।
কী করছে ইউক্রেন
চারদিক থেকে শত্রুপক্ষ ঘিরে রেখেছে পূর্ব ইউরোপের ইউক্রেনকে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে মিত্র দেশটিতে সামরিক সহায়তা পাঠানো শুরু করেছে। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোও ইউক্রেনের আশপাশে অবস্থান বাড়াচ্ছে। এই অবস্থায় মঙ্গলবার কিয়েভ জানায়, তারাও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহড়া চালাবে। এর জন্য তুরস্ক থেকে বিশেষ ড্রোন এবং হালকা ট্যাংক হামলা প্রতিহতের জন্য যুক্তরাজ্য থেকে অস্ত্র পৌঁছেছে ইউক্রেনে।
আরও আগ্রাসী রাশিয়া
শিগগিরই দক্ষিণের কয়েকটি অঞ্চলে বড় পরিসরে ট্যাংক মহড়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ক্রেমলিন।
নৌমহড়ার জন্য ছয়টি রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজকে ভূমধ্যসাগর হয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের বসফরাস প্রণালী হয়ে কৃষ্ণ সাগরের দিকে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া পশ্চিমাদের মিত্র মলদোভায় একই ধরনের সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি দ্বারপ্রান্তে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া।