হিজাব ইস্যুতে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন ঠেকাতে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর সব স্কুল-কলেজের আশপাশে এবার ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ২০০ মিটারের মধ্যে কোনো রকম জমায়েত বা বিক্ষোভ করা যাবে না বলে বুধবার জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
এর আগে হিজাব নিয়ে বিতর্কে তৈরি হওয়া উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার মঙ্গলবার তিন দিনের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে।
বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার কমল পান্ত বলেন, ‘শহরে উত্তেজনা রয়েছে। নতুন করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে স্কুল-কলেজের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’
তিনি জানান, শুক্রবার স্কুল-কলেজ খোলার পর রাজধানীতে ১৪৪ ধারা কার্যকর হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ২০০ মিটারের মধ্যে কোনো জমায়েত বা বিক্ষোভ করা চলবে না।
এদিকে বুধবার কর্ণাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিয়ে হাইকোর্ট কী রায় দেয় সেদিকে তাকিয়ে ছিল দেশটির রাজ্য সরকার। বিচারপতি কৃষ্ণা দীক্ষিত উদুপিতে হিজাব-নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে হওয়া মামলাগুলো পরবর্তী শুনানির জন্য উচ্চতর বেঞ্চে পাঠিয়েছেন।
উদুপি জেলার একটি সরকারি কলেজে গত ৩১ ডিসেম্বর পোশাক নিয়ে বিধিনিষেধ দেয়া হয়। এতে মুসলিম ছাত্রীরা ক্লাস চলাকালে হিজাব বা নেকাব পরে থাকতে পারবেন না বলে জানানো হয়। তবে ক্লাস শেষে বা শুরুর আগে পর্দা করতে আপত্তি নেই বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
১৯৮৫ সাল থেকে এই কলেজ ছাত্রীদের ড্রেস কোড- চুড়িদার কিংবা দোপাট্টা। কিন্তু অনেক মুসলিম ছাত্রী ড্রেস কোড অনুযায়ী পোশাক পরে তার ওপর হিজাব বা নেকাব পরে আসতেন।
কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই দিনই প্রতিবাদ করেন ছয় শিক্ষার্থী। সময়ের সঙ্গে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
মুসলিম ছাত্রীরা বলছেন, তারা বহু বছর ধরে হিজাব পরেই ক্লাস করছেন, এটি তাদের ধর্মীয় বিধানের অঙ্গ।
তবে হিজাব পরার পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ অনেক জায়গাতেই সহিংস রূপ নেয়।
হিজাব পরার বিরোধিতা করতে দেখা গেছে কয়েকটি কট্টর হিন্দু সংগঠনকে। কিছুদিন আগে কোপ্পা জেলার একটি কলেজের ছাত্ররা জাফরান রঙের স্কার্ফ পরে ক্লাসে এসে হিজাব পরার প্রতিবাদ করেন।
হিজাব বিতর্কের অবসান ঘটাতে ৫ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় রাজ্য সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী, স্কুল ও কলেজে সমতা অখণ্ডতা এবং জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে এমন পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, শিক্ষার্থীদের কলেজ উন্নয়ন কমিটি বা প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের অধীনে আসা প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোর প্রশাসনিক বোর্ডের আপিল কমিটির নির্বাচিত পোশাক পরতে হবে।