বাড়ির পরিচারিকার কাজের টোপ দিয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হতো কিশোরীদের। কিছু দিন পরই তাদের সারোগেসি (গর্ভ ভাড়া দেয়া) ব্যবসায় জোর করে নামানো হতো। মানব পাচারকারীদের হাত থেকে পালিয়ে এমনই কাহিনি শোনালেন দুই নারী।
তাদের মধ্যে একজন গত ১৭ বছরে সারোগেসির মাধ্যমে ১০ শিশুর জন্ম দিয়েছেন। অন্য জন জন্ম দিয়েছেন ৬ শিশুর। কিশোরী বয়সে পাচার হয়ে এখন তারা ত্রিশোর্ধ্ব নারী।
কীভাবে ঝাড়খন্ড থেকে কিশোরীদের কাজের নামে নয়াদিল্লিতে পাচার করে সেখানে জোর করে গর্ভ ভাড়া দেয়ার কাজে লাগানো হচ্ছে, তারই বর্ণনা দিয়েছেন ওই দুজন। ১৭ বছর পর পাচারকারীদের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে এমনই দাবি করেছেন তারা।
তারা অভিযোগ করেন, নারী ও কিশোরী পাচারকারী হিসেবে কাজ করে দিল্লির একটি প্লেসমেন্ট এজেন্সি (চাকরি দেয়ার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান)। আড়ালে তারাই জোর করে গর্ভ ভাড়া দেয়ার ব্যবসা চালাচ্ছেন।
সম্প্রতি ঝাড়খন্ড থেকে আটক পাচারকারী চক্রের হোতা পান্নালাল জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, গত ১৭ বছরে পাঁচ হাজারেরও বেশি কিশোরীকে রাজ্য থেকে পাচার করেছেন। তাদের বিভিন্ন প্লেসমেন্ট এজেন্সির কাছে বিক্রি করে তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছেন।
রাজ্যের শিশুকল্যাণ আধিকারিক বৈদ্যনাথ কুমার এই ঘটনার জন্য দিল্লির প্লেসমেন্ট এজেন্সিগুলোকে দায়ী করেছেন।
ইতিমধ্যেই ঝাড়খন্ড সরকার এই ঘটনা নিয়ে দিল্লি সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে এবং একই সঙ্গে চাকরি দেয়ার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যাতে বন্ধ করা যায়, তারও দাবি জানিয়েছে তারা।
ঝাড়খন্ডের খুঁটি জেলার শিশুকল্যাণ কমিটির সাবেক সদস্য বাসন্তী মুন্ডা বলেন, ‘রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলোকে নিজেদের লক্ষ্য বানায় প্লেসমেন্ট এজেন্সিগুলো। আঠারো বছরের কম বয়সীদেরই পরিচারিকার কাজের টোপ দিয়ে পাচার করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বয়সের মেয়েরা পরিণত না হওয়ায় তাদের সহজেই ফাঁদে ফেলতে পারে এজেন্সিগুলো। সচ্ছল জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে শহরে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া হয় ওই মেয়েগুলোকে।’