“মানুষ আমি, আমার চোখে চোখ রেখে/ যদি বলো, ‘তুমি একান্ত আমার’, কী করে থাকবো নির্বাক?/ তারায় তারায় রটিয়ে দেবো, ‘আমি তোমার, তুমি আমার”—প্রেয়সীর মন জিতে তার নাম তারায় তারায় রটিয়ে দিতে চেয়েছেন আধুনিক কবি শামসুর রাহমান।
‘সেই ভুলে ভরা গল্প, কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরোজায়’- গানে গানে নিজের কথা ভালোবাসার মানুষকে জানিয়েছেন সঞ্জীব চৌধুরী। ‘বড়ো বেরঙিন আজকাল/ কাছাকাছি কোনো রঙ পাই না’ –এমন জেনেও ‘না পাওয়ার রঙ’ প্রেয়সীর হাতে দিয়েছেন কবীর সুমন।
কিচ্ছু না ভেবে, মনের মধ্যে কোনো সংশয় না রেখে প্রিয় মানুষটির কাছে ভালোবাসার অনুভূতির কথা অকপটে জানিয়ে দেয়ার দিন আজ। সৌরভ ছড়ানো গোলাপ দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভালোবাসা দিবসের ক্ষণ গণনা। তার ঠিক পরদিন অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি আসে প্রপোজ ডে বা ভালোবাসার কথা প্রিয় মানুষকে জানানোর দিন।
কারও জন্য ভালোবাসার তীব্র অনুভূতি কাজ করলে তাকে মনের কথা খুলে বলাটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। আর বাঙালি সংস্কৃতিতে মনের গোপন কথাটা বলা যেন আরও দুঃসাধ্য কাজ। যদিও বলা হয়, খুব সহজ করে, সাবলীলভাবে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেয়াটা নাকি শ্রেয়।
বলা হয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভালোবাসার কথা জানালে প্রত্যাখ্যানের কোনো শঙ্কা থাকে না। তাই প্রিয় মানুষের মন জিততে হাজারটা উপায় বের করেছে প্রেমিক-প্রেমিকারা।
ছেলেটি এক হাঁটু গেড়ে বসে প্রেয়সীর হাতে তুলে দেন ফুল বা আংটি কিংবা অন্য কোনো উপহার। হাঁটু গেড়ে ভালোবাসার কথা জানানোর প্রচলনটি মূলত মধ্যযুগ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। ওই সময়ে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতদের নাইট উপাধি দেয়া হতো। আর রাজা বা শাসকদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে নিজেদের আনুগত্য দেখাতেন তারা।
মধ্যযুগীয় অনেক শিল্পকর্ম এবং সাহিত্যেও এর ছাপ পাওয়া যায়। মধ্য যুগেও অভিজাত নারীদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে শাশ্বত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করতেন পুরুষরা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসার কথা জানানোর হাজারটা উপায় আবিষ্কৃত হয়েছে। মোমের নিভু নিভু আলোয় কিংবা সমুদ্রের বিশালতাকে সাক্ষী রেখে অথবা আনবক্সিং করে বা প্রথম যেখানে দেখা হয়েছিল সেখানে দাঁড়িয়েও বলা যায় মনের আকুলতা।
চিরায়ত পন্থা অথবা সৃজনশীল কোনো উপায়- যেভাবে হোক না কেন মূল কথা হলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। একদম সব চিন্তা বাদ দিয়ে খুব সহজ করে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলতে পারার মধ্য দিয়ে আপন করে নেয়া যায় প্রিয় মানুষকে।
তবে এদিন বিয়ের প্রস্তাব দেয়াটাকে একটু কঠিন করে দেখা হয়। কারণ একটা মানুষের সঙ্গে জীবন বিনিময়ের সিদ্ধান্তটা রয়ে সয়ে নিতে চান অনেকেই। অবশ্য জীবনসঙ্গী হিসেবে যাকে পেতে চান, তার সঙ্গে বোঝাপড়া, পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের সম্পর্ক তৈরি হলে অবশ্য ভিন্ন কথা।
এমন হলে আজকের দিনে নিজের কথাটা জানিয়ে দিয়ে স্মরণীয় করে রাখতে পারেন মুহূর্তটি। জোয়ার-ভাটার জীবনে ভালো দিন আসুক কিংবা মন্দ সময়, ভালোবাসার কথা জানানোর ক্ষণটি হৃদয় অতলে তবুও বেঁচে থাক অনাদিকাল।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ শতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভালোবাসার প্রস্তাব জানানোর মধ্য দিয়ে প্রপোজ করার ধারণাটির সূচনা হয় ভারতবর্ষে। তবে প্রেয়সীকে আংটি পরিয়ে ভালোবাসার কথা জানানোর প্রথা শুরু করেন অস্ট্রিয়ান আর্কডিউক ম্যাক্সিমিলিয়ান। ১৪৭৭ সালে প্রেয়সী বুরুগুন্ডিকে হীরার আংটি দিয়ে ভালোবাসার কথা জানান তিনি। ১৮৩৯ সালের এই দিনে যুবরাজ আলবার্টকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া।