বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফাইভ-জিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিমান অবতরণে ঝুঁকি

  •    
  • ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৬:৩৭

অল্টিমিটার যদি মোবাইল কোম্পানির সিগন্যালকে ভূমি থেকে প্রতিফলিত সিগন্যাল হিসেবে ধরে নেয়, তাহলে পাইলট নির্ধারিত সময়ের আগেই ল্যান্ডিং গিয়ার নামানোসহ অবতরণের অন্যান্য প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। মোবাইল কোম্পানির সিগন্যালের কারণে অল্টিমিটারের রেডিও সিগন্যাল বাধাগ্রস্ত অথবা বিকৃত হলে অল্টিমিটার প্রতিফলিত সিগন্যাল নাও চিনতে পারে।

দেশে পরীক্ষামূলক চালু হয়েছে পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ফাইভ-জি। রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটক চলতি বছরের মধ্যে দেশের ২০০ জায়গায় ফাইভ-জি চালু করতে চায়। অন্য মোবাইল ফোন অপারেটরাও এ সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সক্ষম হলেও এর কারণে বেশ কিছু জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চগতির মোবাইল ফোনসেবা বিমানের অবতরণের ক্ষেত্রে ঝুঁকির শঙ্কা তৈরি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সাময়িকী দ্য কনভারসেশন। এতে বলা হয়, ফাইভ-জির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বিমান অবতরণে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তবে আমেরিকার ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) আশ্বস্ত করছে, বেশির ভাগ বাণিজ্যিক বিমান এ ক্ষেত্রে নিরাপদ।

আমেরিকান সরকার ২০২১ সালে সি-ব্যান্ড স্পেকট্রামের (তরঙ্গ) কিছু অংশ মোবাইল কোম্পানির জন্য ৮১ বিলিয়ন ডলারে বিক্রির পর থেকেই সমস্যার শুরু। দেশটির কোম্পানিগুলো এখন ফোর-জি নেটওয়ার্কের ১০ গুণ বেশি গতিতে ফাইভ-জি সেবা দিতে সি-ব্যান্ড স্পেকট্রাম ব্যবহার করছে।

সি-ব্যান্ড স্পেকট্রাম বিমানে ব্যবহৃত মূল ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার ফ্রিকোয়েন্সির কাছাকাছি। এই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে বিমান নিরাপদে অবতরণ করে। বিমানের ওঠানামার ক্ষেত্রে একই ফ্রিকোয়েন্সের ফাইভ-জি কী ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে, সেটি ব্যাখ্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ইনফরমেশনস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক প্রসেনজিত মিত্র।

বিশৃঙ্খল স্পেকট্রামে ঝুঁকি

রেডিও সিগন্যাল রেডিও তরঙ্গ দিয়ে বাহিত হয়। রেডিও তরঙ্গের দৈর্ঘ্য ৩ হার্টজ থেকে ৩ হাজার গিগাহার্টজ পর্যন্ত এবং এটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের অংশ। রেডিও স্পেকট্রামের যে অংশটি ফোন এবং অন্যান্য তারহীন ডিভাইস থেকে সংকেত বহন করে তার দৈর্ঘ্য হলো ২০ কিলোহার্টজ থেকে ৩০০ গিগাহার্টজ।

একই এলাকায় দুটি ওয়্যারলেস সিগন্যাল একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করলে শব্দ বিকৃত হয়। এ কারণে দুটি রেডিও স্টেশন একই ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার করলে নয়েজ বা অস্পষ্টতা তৈরি হয়।

এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের ব্যবহার ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। রেডিও স্টেশন, মোবাইল ফোন কোম্পানি ও অন্যান্য সংস্থাকে সুশৃঙ্খলভাবে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারের জন্য আলাদা ‘লেন’ বা রাস্তা তৈরি করতে হয় এবং এ ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সির নির্দিষ্ট স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেয়া হয়।

রেডিও ওয়েভকে মাটিতে প্রতিফলিত করা

আধুনিক বিমান অল্টিমিটার ব্যবহার করে। বিমানের উচ্চতা নির্ণয় করতে ভূমি থেকে প্রতিফলিত হতে একটি রেডিও সিগন্যালের যে সময় লাগে তা হিসাব করে বিশেষ এই যন্ত্র। অল্টিমিটারগুলো স্বয়ংক্রিয় অবতরণ সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে পাইলটের চোখের সামনে দৃশ্যমানতা কম থাকে, সেখানে এটি খুবই দরকারি।

কোনো অল্টিমিটার যদি মোবাইল কোম্পানির সিগন্যালকে ভূমি থেকে প্রতিফলিত সিগন্যাল হিসেবে ধরে নেয়, তাহলে পাইলট নির্ধারিত সময়ের আগেই ল্যান্ডিং গিয়ার নামানোসহ অবতরণের অন্যান্য প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। মোবাইল কোম্পানির সিগন্যালের কারণে অল্টিমিটারের রেডিও সিগন্যাল বাধাগ্রস্ত অথবা বিকৃত হলে অল্টিমিটার প্রতিফলিত সিগন্যাল নাও চিনতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিমান ভূমির ঠিক কতটুকু কাছে আছে, সেটা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে যায়।

এ জন্য স্পেকট্রামের যে ফ্রিকোয়েন্সি বিমান ও মোবাইল কোম্পানি ব্যবহার করে, তা আলাদা। সমস্যা হলো, বিমানের অল্টিমিটার ৪.২ থেকে ৪.৪ গিগাহার্টজ ব্যবহার করে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল কোম্পানিগুলোর জন্য বরাদ্দ সি-ব্যান্ড স্পেকট্রাম ৩.৭ থেকে ৩.৯ গিগাহার্টজের। দুটির মধ্যে যে ০.২২ গিগাহার্টজের পার্থক্য তাতে অল্টিমিটার একে ভুল সিগন্যাল হিসেবে ধরে নিতে পারে, আবার মোবাইল কোম্পানির সিগন্যাল বিমানের অল্টিমিটারের সিগন্যালের বিকৃতিও ঘটাতে পারে।

আপাতত যেভাবে সমস্যার মোকাবিলা

মোবাইল সার্ভিস কোম্পানি এটিঅ্যান্ডটি ও ভেরাইজন ছয় মাসের জন্য বিমানবন্দরের কাছে তাদের নতুন মোবাইল অ্যান্টেনা স্থাপন বন্ধ রাখতে রাজি হয়েছে। তবে তাতেও সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়নি।

টেলিকম ইন্ডাস্ট্রি দাবি করছে, ০.২২ গিগাহার্টজের পার্থক্য যথেষ্ট এবং এতে কোনো সমস্যা হবে না। তবে বিমান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, ঝুঁকি অল্প হলেও যেকোনো বিমান দুর্ঘটনার ফলাফল ভয়াবহ।

কোনো ধরনের সমস্যা হবে কি না সেটি নির্ভর করছে বিমানের অল্টিমিটার ও এর সংবেদনশীলতার ওপর। প্রসেনজিত মিত্র বলছেন, বিভ্রান্তিকর কোনো সিগন্যাল অল্টিমিটার পর্যন্ত যে পৌঁছাবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বিমানের অল্টিমিটার আপগ্রেড করা একটি ব্যয়বহুল বিষয় এবং খরচ কে দেবে তা নিশ্চিত নয়।

এফএএ অল্টিমিটার পরীক্ষা করে যেগুলোর ওপর নির্ভর করা যায়, সেগুলোর অনুমোদন দিচ্ছে। বিমান কর্তৃপক্ষকে একটি সমাধানে পৌঁছাতে ছয় মাস সময় দিয়েছে এটিঅ্যান্ডটি ও ভেরাইজন। ততদিন তারা আমেরিকার ৫০টি বড় বিমানবন্দরের কাছে ফাইভ-জি টাওয়ার স্থাপন করবে না। আপাতত এটি সংকটের একটি সমাধান, তবে স্থায়ী কোনো বন্দোবস্ত নয়।

এ বিভাগের আরো খবর