বাস্তবের জগতের পরিবর্তে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কল্পনার সবকিছু ‘পাইয়ে দেয়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেটাভার্স নিয়ে আসছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ত্রিমাত্রিক এই নেটওয়ার্কে কী কী ফিচার আসছে তা নিয়ে কৌতুহল বিশ্বব্যাপী।
তবে নতুন এই প্রযুক্তি মানুষের হয়রানি বাড়িয়ে দিতে পারে, এমন আশংকাও দিনে দিনে জোরালো হচ্ছে। একজন নারী এরই মধ্যে অভিযোগ তুলেছেন, মেটাভার্সের জগতে ভার্চুয়ালি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনি।
অভিযোগটির বিষয়ে অবশ্য পদক্ষেপ নিয়েছে মেটা কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির পক্ষ থেকে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, ভার্চুয়াল সহিংসতা ও নিপীড়ন ঠেকাতে ‘পারসনাল বাউন্ডারি’ নামে একটি ফিচার চালু করা হচ্ছে। এর ফলে অনাহূত কেউ হুটহাট করে কারও ভার্চুয়াল প্রতিরূপ বা অবতারের কাছে ঘেঁষতে পারবে না।
ফেসবুক নামে পরিচিত মেটা কোম্পানির পক্ষ থেকে শুক্রবার এক ব্লগ পোস্টে ভার্চুয়াল যৌন সহিংসতার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে নতুন ফিচার চালুর ঘোষণা দিয়ে তারা বলেছে, ‘পারসনাল বাউন্ডারি’ ফিচারটি মেটাভার্স ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল অবতারকে অন্যের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেবে।
মেটার হরাইজন ওয়ার্ল্ডস এবং হরাইজন ভেন্যুস ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ওয়ার্ল্ডে যুক্ত হচ্ছে বিশেষ এই ফিচার।
মেটার হরাইজন ওয়ার্ল্ডস-এর বেটা ভার্সনের পরীক্ষা হয় গত বছরের শেষের দিকে। আর সে সময়েই ব্রিটিশ এক নারী ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কার্যত সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলেন।
মেটাভার্সে ভার্চুয়ালি ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন নিনা প্যাটেল
নিনা প্যাটেল নামের ৪৩ বছরের ওই নারী জানান, ভার্চুয়াল জগতে তার প্রতিরূপ বা অবতার পা রাখার পর তিন থেকে চারটি পুরুষ অবতার তাকে আক্রমণ করে।
একটি পোস্টে প্যাটেল লেখেন, “মেটাভার্সে ঢোকার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে আমাকে মৌখিক ও যৌন হয়রানি করা হয়েছিল। তিন থেকে চারজন পুরুষ অবতার কার্যত আমার অবতারকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ শুরু করে এবং তারা ঘটনার ছবি তুলেছিল৷ আমি পালানোর চেষ্টা করলে তারা চিৎকার করে বলেছিল- এমন ভান করো না যে, তুমি এটা উপভোগ করছ না।”
নিনা জানান অভিজ্ঞতাটি এত ভয়াবহ এবং দ্রুত ঘটেছিল যে তিনি নিরাপত্তা টুলস ব্যবহারের চিন্তা করতেও ভুলে যান।
এ ঘটনা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে বলেও অভিযোগ করেন নিনা। ব্যক্তি সুরক্ষা জোরদারে গত ১ ডিসেম্বর একটি বিবৃতি দেন তিনি।
এর তিন দিনের মাথায় মেটার নিরাপত্তা ফিচারে পরিবর্তন আনার কথা জানানো হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনাহূত কেউ আপনার ব্যক্তিগত সীমানায় প্রবেশের চেষ্টা করলেই নতুন ফিচারটি তার এগিয়ে আসা আটকে দেবে। আমরা বিশ্বাস করি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে মানুষ কতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে সেটি তাদের ব্যক্তিগত সীমানা সুরক্ষার ওপর নির্ভরশীল।’
মেটাভার্স ব্যবহারকারীদের চার ফুটের মধ্যে কোনো বিরক্তিকর অবতার এলে তাকে আটকে দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে বলেও কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ফেসবুক নিয়ে নানা বিতর্কের মুখে মেটাভার্সকে এগিয়ে নেয়ার উচ্চাভিলাষী প্রকল্প গ্রহণ করেন মার্ক জাকারবার্গ। তবে এ ধরনের বিতর্ক তৈরি হলে মেটাভার্সও ব্যবহারকারীদের আস্থা হারাতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।