না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন গোটা সংগীত জগৎ।
সুরসম্রাজ্ঞীর মৃত্যুর খবরে মুষড়ে পড়েছেন সংগীত জগতের আরেক জীবন্ত কিংবদন্তি আল্লাহ রাখা রহমান (এ আর রহমান)।
টুইটের পাশাপাশি এক ভিডিও বার্তায় সদ্য প্রয়াত শিল্পীর স্মৃতিচারণা করেন এ আর রহমান। ৪ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে কিংবদন্তি গায়িকার স্মৃতিচারণা করার সময় আপ্লুত হয়ে পড়েন।
খোলাখুলি বলেছেন কীভাবে লতা মঙ্গেশকর তার জীবন বদলে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আজ বড় কঠিন একটা দিন। লতাজি শুধু আইকন নন, ভারতীয় সংগীত, সাহিত্য-কবিতার একটা অংশ উনি। এই শূন্যতা চিরকালের জন্য রয়ে যাবে আমাদের মধ্যে। একটা সময় ছিল, ঘুম থেকে উঠে রোজ সকালে লতা দিদির ছবি দেখতাম। আর নিজেকে অনুপ্রেরণা জোগাতাম। আমি ভাগ্যবান যে ওনার সঙ্গে বেশ কয়েকটা গান রেকর্ড করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।
‘হিন্দুস্তানি মিউজিক, উর্দু-বাংলা কবিতা, আরও অনেক ভাষাতেই সাবলীল ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। বাবার কথা মনে পড়ছে খুব। উনি আমার ঘরে লতা দিদির একটি ছবি রেখেছিলেন। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ওনার মুখ দেখেই আমি রেকর্ডিংয়ে যেতাম। বহুবার ওনার শোয়েও অংশগ্রহণ করেছি।’
কীভাবে লতা মঙ্গেশকর তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন, তাও জানালেন রহমান। ধরা গলাতেই বললেন, ‘মিউজিক কম্পোজার হিসেবে আমি কখনও আমার গায়ক সত্তাকে গভীরভাবে নিতাম না। কিন্তু একটা ঘটনা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। একবার আমি লতাজির জন্য বেশ কয়েকটা গান কম্পোজ করেছিলাম। ভোর ৪টার সময় দেখলাম, উনি নিজের ঘরে সেই গান প্র্যাকটিস করছেন। অত ভোরে! আর সেদিনের সেই একটা ঘটনাই আমার জীবন পুরো বদলে দিয়েছে। তার পর থেকে যতগুলো শো করেছি, আমি তার আগে তানপুরাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে গলা সাধতে বসে যেতাম। এখনও সেই রেওয়াজ আছে।
‘একবার লতাজি আমাকে ফোন করে বলছিলেন, জানো রহমান, আগে নওশাদ সাহেব একটা গান রেকর্ড করার আগে ১১ দিন ধরে প্র্যাকটিস করাতেন। তোমরা এখন কতটা সময় নাও প্রাক-রেকর্ডিং প্রস্তুতি সারতে?
‘তখন আমি বুঝতে পারি যে একটা গান রেকর্ড করার নেপথ্যে কতটা ভালোবাসা, আধ্যাত্মিকতা, প্যাশনের প্রয়োজন হয়। লতা মঙ্গেশকরই আমাকে শিখিয়েছেন, সংগীত সাধনা হোক বা যেকোনো সৃষ্টি, নিজেকে পুরোপুরি সেখানে উৎসর্গ করে দাও, কর্ম করে যাও, ফলের আশা কোরো না। ওনার মৃত্যুতে যে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হলো, কোনো দিন তা পূরণ হবে না।
‘মোহম্মদ রফি, মান্না দে, সলিল চৌধুরী, শচীনদেব বর্মণ, রাহুলদেব বর্মণ, লতাজি ভারতীয় সংগীতের যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গিয়েছেন, আজীবন তাদের সেই অবদান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।’
এর আগে টুইটে লতা মঙ্গেশকরের পাশে বসা একটি ছবি পোস্ট করে শোক জানান এ আর রহমান। ছবিতে দেখা গেছে, লতা মঙ্গেশকর একটি সোফায় বসে আছেন। তার পায়ের কাছে মেঝেতে হাস্যোজ্জ্বল রহমান।
করোনা শনাক্ত হওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় লতাকে। তার নিউমোনিয়াও ধরা পড়েছিল।
মৃদু উপসর্গ থাকা লতাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল।
উন্নতির লক্ষণ দৃশ্যমান হওয়ায় ২৮ জানুয়ারি লতার ভেন্টিলেটর সাপোর্ট খোলা হয়। তবে ৫ ফেব্রুয়ারি আবার অবস্থার অবনতি হয় তার। ফের ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়।
অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় কষ্টকর থেরাপিও নিতে হয়েছিল লতাকে। মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে স্থানীয় সময় রোববার সকালে পরপারে চলে যান এই সুরের জাদুকর।