রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান উত্তেজনার মাঝেই এবার নতুন একটি বিষয় সামনে নিয়ে এলো রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলো। ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েন ও বেলারুশের সঙ্গে দেশটির চলমান মহড়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ইউক্রেনও প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে।
রাশিয়ার গণমাধ্যম স্পুৎনিক নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সেনারা শহুরে লড়াই ও অন্যান্য যুদ্ধকৌশলের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তারা প্রিপইয়াট নামের একটি পরিত্যক্ত শহর বেছে নিয়েছে।
এ শহরটি পূর্বে সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক (ইউএসএসআর) থাকা অবস্থায় ইউক্রেনের চেরনোবিলের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তেজস্ক্রিয়তার কারণে পরিত্যক্ত হয়।
ইউক্রেনের উত্তরের শহর প্রিপইয়াটের কিছু দুর্লভ বৈশিষ্ট্য একে যুদ্ধ কৌশল রপ্ত করার জন্য উপযুক্ত শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু ব্যাপারটি খুবই ভয়াবহ। কারণ শহরটি চেরনোবিলের তেজস্ক্রিয় জোনের মধ্যেই অবস্থিত।
১৯৮৬ সালে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয় পরীক্ষা করতে গিয়ে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সে সময় এলাকাটিতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণ হারায় অনেকেই। তৎকালীন সোভিয়েত সরকার শহরটি থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়।
তবে এই বিপজ্জনক স্থানেই প্রশিক্ষণ নিতে পেরে সন্তুষ্ট দেশটির সেনারা। ইউক্রেনের একজন সেনা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, আশপাশে কোনো বেসামরিক মানুষ না থাকায় আমরা সত্যিকার গোলাবারুদ ব্যবহার করছি, ফলে পরিস্থিতিকে শহুরে যুদ্ধক্ষেত্রের মতই মনে হচ্ছে।
চেরনোবিল এক্সক্লুসিভ জোন বেসামরিক মানুষের জন্য উন্মুক্ত নয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ নম্বর চুল্লিতে আগুনের ফলে এ অঞ্চলের মাটিতেও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে। এই এক্সক্লুসিভ জোনটি প্রায় ১ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্মৃত।
পাশের দেশ বেলারুশের মধ্যেও এক্সক্লুসিভ জোনের কিছু অংশ রয়েছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে সেনারা মর্টার নিক্ষেপ প্রশিক্ষণ, শহুরে লড়াইয়ে স্নাইপার ব্যবহারের পাশাপাশি বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নেয়া ও আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণও নিচ্ছে।
এদিকে রাশিয়াও ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধমহড়া জোরদার করেছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর ‘ফলস ফ্লাগ হামলা’ চালাতে চাচ্ছে। দেশটি কোনো সাজানো হামলার ভিডিও দৃশ্যধারণ কিংবা আধুনিক গ্রাফিক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখাবে যে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর হামলায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাশিয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ইউক্রেনে হামলা চালাতে চাচ্ছে। রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ এমন কিছু ছবি গ্রাফিক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করবে, যেখানে দেখা যাবে ইউক্রেনের হামলায় রুশ অধ্যুষিত পূর্ব ইউক্রেনের শহর ডনবাসে অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে।
কর্মকর্তার দাবি, পরবর্তী সময়ে এই অভিযোগের ভিত্তিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করতে পারে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেছেন, ইউক্রেনকে অস্থিতিশীল করার জন্য রাশিয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত আগ্রাসন এবং গোপন তৎপরতার স্পষ্ট ও হতাশাজনক প্রমাণ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা।
রাশিয়া এর জবাবে বলেছে, কোনো ধরনের ফলস ফ্লাগ (মিথ্যা অভিযোগে) হামলার পরিকল্পনা নেই তাদের।
যদিও ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে। প্রতিবেশী বেলারুশের সঙ্গে চালাচ্ছে সামরিক মহড়া। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো যেকোনো সময়ে ইউক্রেনে হামলার আশঙ্কা করছে।