ইউক্রেন সংকটের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর প্রভাব রুখে দিতে রাশিয়ার সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে চীন।
শুক্রবার মিত্র দেশ চীন সফরে যান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বেইজিংয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন সফরকারী প্রেসিডেন্ট পুতিন। তাদের বৈঠকের পর মস্কো ও বেইজিং থেকে আলাদা বিবৃতিতে এমন তথ্য উঠে আসে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বলয় থেকে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে সুরক্ষা দেয়া এবং সমাজতন্ত্রের বিস্তাররোধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের যাত্রা শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। তাই এই দীর্ঘ সময় বিভিন্ন ইস্যুতে ন্যাটো ও রাশিয়াকে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দেখা যায়।
ঠান্ডাযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে রুশ ফেডারেশন থেকে আলাদা হয়ে যায় সোভিয়েত রিপাবলিক ইউক্রেন।
সম্প্রতি দেশটির সীমান্তে এক লাখের মতো সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। ন্যাটো জোটে ইউক্রেনের যোগ দেয়ার বিষয়ে দীর্ঘ সময় বিরোধিতা করে আসছে মস্কো। দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিনের দাবি, ঐতিহ্যগতভাবে রুশ ও ইউক্রেনের নাগরিকরা এক জাতি। তাই ইউক্রেনের আলাদাভাবে ন্যাটো জোটভুক্ত হওয়ার দরকার নেই।
বৈঠকে ইউক্রেন সংকটের কথা সরাসরি উল্লেখ না করলেও এই দুই শক্তিধর দেশের প্রধানরা অভিযোগ করেন, ন্যাটো জোট ঠান্ডাযুদ্ধকালের মতো গোয়েন্দাগিরি ও নজরদারি করছে।
এদিকে পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার আধিপত্য রুখে দিতে সেখানে সেনা মোতায়েন বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটনের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট। যেকোনো সময়ে ইউক্রেন সীমান্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংঘাত।
রুশ আধিপত্য রুখে দিতে ইউক্রেনে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাঠিয়েছে ন্যাটোভুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে চীনের অবস্থান অনেকেটা মধ্যমপন্থি। ইউক্রেনের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহাল রাখতে চায় বেইজিং। সেই সঙ্গে মিত্র দেশ রাশিয়ার সঙ্গেও সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বেইজিং।
বৈঠকে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার ও প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও পুতিনের এই সফর।
বৈঠক শেষে শীতকালীন অলিম্পিক উদ্বোধন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং।
চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে প্রায় দুই বছর পর এই প্রথম মুখোমুখি হলেন শক্তিধর এই দুই দেশের প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি মিত্র দেশ চীনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এবারের শীতকালীন অলিম্পিক বয়কট করেছে। যদিও চীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
প্রাকৃতিক গ্যাসসহ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে এই দুই প্রেসিডেন্ট অন্তত ১৫টি সমঝোতা স্মারকেও সই করেন। পরে দুই রাষ্ট্রপ্রধান একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন।