রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) করা মামলার বিচারকাজের ওপর থেকে আপত্তি তুলে নিয়েছে দেশটির ছায়া সরকার।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী ছায়া সরকার।
বিবৃতিতে মামলাটির বিচারকাজ থেকে আপত্তি তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এর আগে ক্ষমতায় থাকাকালে এ বিচারকাজে আপত্তি জানিয়েছিলেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি। তবে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থান হলে তার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) আইনপ্রণেতা ও দলটির জাতিগত মিত্রদের নিয়ে ছায়া সরকার গঠন করা হয়।
বিবৃতিতে ছায়া সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে নৃশংসতা চালিয়েছে, আইসিজের পক্ষ থেকে সেই বিষয়ের স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন। এতে জান্তা সরকার এখন যেসব নৃশংস অপরাধ করছে সেগুলো বন্ধ হওয়ার পথ তৈরি হবে।
মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সামরিক অভিযান শুরু করার পর রাখাইন রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা তাদের জন্মভূমি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। তাদের বেশিরভাগ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়।
রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের নভেম্বরে আইসিজেতে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ আদালত অবস্থিত।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এ মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন সু চি।
শুনানিতে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
সেসময় তিনি দাবি করেন, রাখাইন রাজ্যের ঘটনায় গাম্বিয়া অসম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরে আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে।
আইসিজের তদন্ত ও বিচারের এখতিয়ার নিয়েও তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন।
কিন্তু গত বছরের সেনা অভ্যুত্থানের পর চিত্র বদলে যায়। সু চিকে আটক করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
অভ্যুত্থানের পর গঠিত জান্তাবিরোধী ছায়া সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগের ওই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলে নিয়েছে তারা।
মিয়ানমারের ছায়া সরকারের এমন অবস্থানের বিষয়ে আইসিজের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।