বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশ-সন্তানের জন্য যুদ্ধে যেতে তৈরি ইউক্রেনের নারীরা

  •    
  • ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২০:০৮

রুশ হামলার হুমকির মুখে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ইউক্রেনের নারীরা। কিয়েভের কাছে ট্রেনিং সেন্টারে প্রতি শনিবার হাজির হন অসংখ্য বেসামরিক নারী। সেখানে রিজার্ভ বাহিনীর সেনাদের শেখানো হয় কীভাবে চেক পয়েন্টে কাজ করতে হয়, রাইফেল চালাতে হয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ ভবন রক্ষা করতে হয়।

রাশিয়ার ট্যাংকবহর যেদিন কিয়েভে প্রবেশ করবে, সেদিন মারটা ইয়ুজকিভ তার সন্তানদের সঙ্গে থাকবেন না। স্বদেশি অন্য নারীদের মতো ৫১ বছর বয়সী বিজ্ঞানী মারটাও তার যমজ সন্তানদের ঘরে রেখে ইউক্রেনের রাজধানী রক্ষায় হাতে অস্ত্র তুলে নেবেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফকে নাটিভকা শহরের বাসিন্দা মারটা বলেন, ‘আপনি শত্রুকে হত্যা না করলে, তারা আপনার সন্তানদের হত্যা করবে।’

প্রায় এক লাখ রুশ সেনার হামলা ঠেকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেন। দেশটির নারী ও পুরুষ দলে দলে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর রিজার্ভ ইউনিটে নাম লেখাতে ছুটছেন।

সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ইউক্রেনের নিয়মিত সেনাবাহিনীর ১৫.৬ শতাংশ নারী। এ সংখ্যা ২০১৪ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ। তুলনামূলকভাবে যুক্তরাজ্যের সেনাবাহিনীতে নারী সদস্য এখন ১১ শতাংশ।

প্রতি শনিবার কিয়েভের কাছে ট্রেনিং সেন্টারে হাজির হন বেসামরিক নারীরা। সেখানে রিজার্ভ বাহিনীর সেনাদের শেখানো হয় কীভাবে চেকপয়েন্টে কাজ করতে হয়, রাইফেল চালাতে হয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ ভবন রক্ষা করতে হয়।

মারটার জন্য সামরিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে অত্যন্ত কঠিন। এর কারণ কর্মজীবনে তিনি একজন ক্লিনিক্যাল রিসার্চ এক্সপার্ট।

তবে মারটা মনে করেন, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের হুমকি যতক্ষণ দিয়ে যাবে, ততক্ষণ মাতৃভূমিকে রক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ‘আমি যুদ্ধের বলি হতে চাই না। পরাধীনভাবে বাঁচতে চাই না। আমি দেশ ছেড়েও যাব না। নিজের ভূমি, পরিবার ও দেশের জন্য আমি যুদ্ধ করব।’

ইউক্রেন সরকার গত ডিসেম্বরে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী শারীরিকভাবে সক্ষম নারীদের সামরিক বাহিনীতে নাম নিবন্ধনের আহ্বান জানায়।

ডামি রাইফেলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ইউক্রেনের এক নারী। ছবি: এপি

মারটা বলেন, ‘এখানে (সেনাবাহিনী) পুরুষদের সঙ্গে আমাদের কোনো পার্থক্য নেই। শারীরিক পরিশ্রমও এক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমার মনে হয় নারীদের স্ট্যামিনা বেশি।’

মারটার স্বামী ৪৩ বছর বয়সী সার্জিও রিজার্ভ বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। দুজন একই ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সেখানে সার্জির সুপারভাইজার ছিলেন মারটা। দ্রুতই তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে যান।

এখন তারা লক্ষ্য নিখুঁত করতে এয়ারসফট রাইফেল নিয়ে বাড়িতে একসঙ্গে অনুশীলন করেন।

নতুন এ কঠিন জীবন তাদের বেশ কিছু কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, যুদ্ধের সময় কীভাবে সন্তানদের নিরাপদে রাখবেন এবং দেশের প্রয়োজনে কী করে শত্রুকে হত্যা করবেন।

এ দম্পতির এখনকার পরিকল্পনা হলো, রুশ আক্রমণ শুরু হলে তাদের ১৩ বছর বয়সী দুই ছেলে বাড়িতেই থাকবে। তবে কিয়েভের পতন হলে দুজনকে আরও পশ্চিমে সরিয়ে নেয়া হবে।

তারা বাড়ির বেজমেন্টে একটি বোমানিরোধক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছেন। সেখানে টিনজাত খাবার ও অন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ মজুত করা হয়েছে। তাদের কাছে বাড়িতে তৈরি ওয়াইনও রয়েছে। বাড়ির সবজির বাগান ও মুরগির খামার থেকে পর্যাপ্ত খাদ্যের জোগান পাওয়া যাবে।

মারটার প্রশিক্ষকদের একজন ইরিনা ইয়োসিপেঙ্কো, তিনি সেনা চিকিৎসক। তিনি ২০১৪ সালের যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। সম্প্রতি আবার সেনাবাহিনীতে ফিরে এসেছেন।

ইরিনা স্বেচ্ছাসেবকদের শেখান কীভাবে আহতদের উদ্ধার করে আনতে হয়, আঘাতের পরিচর্যা করতে হয়, ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়াতে হয় ও রক্তপাত বন্ধ করতে হয়।

তিনি বলেন, ‘আমি এবার, এমনকি ২০১৪ সালেও দেখেছি ইউক্রেনের নারীরা খুবই পরিশ্রমী এবং যেকোনো সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে প্রস্তুত। তারা তাদের দেশকে রক্ষা করতে তৈরি।’

যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া নারীদের বিষয়ে কিছু নেতিবাচক প্রচারের সমালোচনাও করেন ইরিনা। তিনি বলেন, ‘যে নারীরা অতীতে পুরুষ সৈনিকদের কাছ থেকে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টে এখনকার নারীদের উপহাস করেছেন।

‘তারা বলেন যে, যুদ্ধ নারীদের কোনো জায়গা নয়। দুঃখজনকভাবে এটি বৈষম্য সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। তবে আমি সেনাবাহিনীর বর্তমান সদস্যদের কাছ থেকে এমনটা শুনি না। আমি এমন নারীদের দেখে আনন্দিত, যারা বলছেন- নিজের দেশ বাঁচাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন।’

ইরিনার মতে, নারীদের যোগদানের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তানদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা। যদিও অনেকে বাচ্চাদের একা ফেলে লড়াইয়ে নামার সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধায় আছেন।

নাটিভকার বাসিন্দা মারটা অবশ্য দাবি করেছেন, তার সন্তানেরা নিজেদের খেয়াল রাখতে পুরোপুরি সক্ষম। দুই সন্তানই ফার্স্ট এইড দেয়া শিখছে।

তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা মিত্র, বিশেষ করে ব্রিটেনের অসাধারণ সমর্থন পাওয়ায় আমাদের মনোবল আরও চাঙা হয়েছে।’

উইন্সটন চার্চিলের ভক্ত মারটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ব্রিটিশ স্লোগান অনুসারে বলেন, ‘শান্ত থেকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছি। আমরা স্বাধীন। শক্তিশালী ও প্রশিক্ষিত একটি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। আমরা আবারও শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের রক্ষা করতে প্রস্তুত।’

এ বিভাগের আরো খবর