দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আফগানিস্তানের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলেছে। নারী শিক্ষার্থীদের ফেরা নিয়ে সংশয় থাকলেও পুরুষ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ফিরেছেন তারাও। তবে এর জন্য বেঁধে দেয়া হয়েছে শর্ত।
গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পর সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেয় তালেবান। বুধবার প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়নি এখনও। তবে তালেবানের শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, পুরুষ শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা থাকার শর্তে নারীদের ক্লাস করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর জালালাবাদের নানগারহার বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা একটি দরজা দিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
নানগারহার বিশ্ববিদ্যালয় আফগানিস্তানের বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।
তালেবানের উচ্চশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী শেখ আব্দুল বাকী হাক্কানি রোববার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেন।
সে সময় তিনি জানান, যেসব প্রদেশে শীত কম সেসব জায়গার বিশ্ববিদ্যালয় ২ ফেব্রুয়ারি খুলবে। এ ছাড়া শীত বেশি এমন প্রদেশে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালেবান শাসন চলার সময়ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীরা নিষিদ্ধ ছিলেন।
গত বছরের ১৫ আগস্ট কাবুল দখলে নেয় তালেবান। এরপর তালেবান সদস্যরা দাবি করেন, পাল্টে গেছেন।
তবে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তালেবান দেশটির নারীদের কাজ ও পড়াশোনার অধিকারের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। দেশের বেশির ভাগ অংশে নারীদের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা নিষিদ্ধ করে। শান্তিপূর্ণ নারী বিক্ষোভকারীদের মারধর ও পিপার স্প্রে নিক্ষেপের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নানগারহার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী জানান, শ্রেণিকক্ষ ইতোমধ্যেই আলাদা করা হয়েছে। কোনো পুরুষ শিক্ষক তাদের পাঠদান করতে পারবেন কি না তা এখনও জানানো হয়নি। সেই সঙ্গে পুরুষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারবেন কি না তাও স্পষ্ট করা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্লাসের সময় আলাদা করা হয়েছে। পুরুষ শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে আমাদের হাঁটতে মানা করা হয়েছে।’
বিদেশি সহায়তা ও বিদেশে জব্দ করা অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দিতে তালেবানকে নারী শিক্ষা নিশ্চিতের মতো কিছু শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার এ সিদ্ধান্তকে মঙ্গলবার রাতে স্বাগত জানিয়েছিল আফগানিস্তানে নিয়োজিত জাতিসংঘ মিশন।
জাতিসংঘ মিশন টুইটারে এক পোস্টে বলে, ‘২ ফেব্রুয়ারি থেকে সব পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীর জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার ব্যাপারে তালেবান যে ঘোষণা দিয়েছে তাকে স্বাগত জানায় জাতিসংঘ। প্রতিটি মানুষের শিক্ষা অর্জনের সমান সুযোগ পাওয়া জরুরি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তালেবান সরকারের এক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘নারী শিক্ষার্থীদের আলাদা রেখে পাঠদানের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের আলাদা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের কথা বলা হয়েছে। নারী ও পুরুষদের আলাদা সময়ে পাঠদানেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
নানগারহার প্রদেশের প্রধান খলিল আহমদ বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানের নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের আলাদা কক্ষে পাঠদান করা হবে। অনেক প্রদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই এ নিয়ম চালু আছে।’