ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে। প্রতিবেশী ও মিত্র বেলারুশের সঙ্গে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে দেশটি। এদিকে ন্যাটোও ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করছে। পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত।
রাশিয়ার আগ্রাসনের আশঙ্কা করছেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ঠিক এরই মধ্যে আরও একবার ইউক্রেন ইস্যুতে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও কথার ঝড় বয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ডাকা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মিটিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মাঝে কথার যুদ্ধ হয়ে গেছে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, ইউরোপে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সেনা মোতায়েনের ঘটনা ঘটিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র অযথা অস্থিরতা ছড়াচ্ছে ও রাশিয়ার বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করছে।
জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে- এমন কোনো প্রমাণই নেই।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া প্রায়ই তার সীমান্তের ভেতরেই সেনা মোতায়েন করে থাকে। এগুলো তো যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ঘামানোর বিষয় নয়।
তবে থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, কূটনৈতিক উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার এখনও সমাধান সম্ভব। তবে সামরিক আগ্রাসন চালালে যুক্তরাষ্ট্র শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবে, যার পরিণতি হবে ভয়ানক।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে জানিয়েছে, রাশিয়া যে কোনো সামরিক আগ্রাসন ইউক্রেনে চালালেই দেশটির ওপর অবরোধ আরোপ করা হবে।
শুধু রাশিয়াই নয়, পুতিনের ওপর ব্যক্তিগত অবরোধ আরোপের হুমকিও দিয়েছেন বাইডেন।
এর আগে রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করায় ন্যাটোর সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
ন্যাটো আশঙ্কা করছে যে কোনো সময় রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করতে পারে। এত দিন রাশিয়া আক্রমণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও সম্প্রতি রাশিয়াও কিছুটা সুর বদলেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, তার দেশ নিজের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার যে হুমকি দিয়েছে সে সম্পর্কে ল্যাভরভ আরও বলেছেন, মস্কো যে কোনো পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত রেখেছে।
এদিকে ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশ ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন না করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ব্যাপক প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।
এ ছাড়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করছে ন্যাটোও। পূর্ব ইউরোপে বাড়তি যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে তারা। ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাড়তি সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে।
ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ বলেছেন, ন্যাটো সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এমনকি ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিমেও যুদ্ধসেনা মোতায়েন করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপত্যকা দখলে নেয় রাশিয়া। শুরু হয় ইউক্রেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে মস্কো মদতপুষ্ট বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে কমপক্ষে ১৪ হাজার মানুষ নিহত হন।