যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তে ঠান্ডায় জমে মারা যাওয়া চারজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। ভারতীয় এই চার নাগরিক পাচারচক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন বলে ধারণা কানাডা সরকারের।
মৃতরা হলেন ৩৯ বছরের জগদীশ প্যাটেল, ৩৭ বছরেরর বইশালিবিন প্যাটেল। তাদের ১১ বছরের সন্তান ভিহাঙ্গি এবং তিন বছরের ধার্মিক।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মানিটোবা প্রদেশে এই ঘটনা ঘটে। সেদিন পরিবারটি হেঁটে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের চেষ্টা করছিল সেই রাতে তাপমাত্রা মাইনাস ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমেছিল।
সীমান্তের পূর্বাঞ্চলের একটি মাঠ থেকে ১৯ জানুয়ারি তাদের মরদেহ উদ্ধার হয়।
মৃতদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশন এবং রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ- আরসিএমপি।
তারা জানিয়েছে, ভারতের গুজরাটের গান্ধীনগর জেলার ডিঙ্গুচা গ্রামের বাসিন্দা তারা।
সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ১০ দিন আগে পর্যটক ভিসা নিয়ে কানাডায় যাত্রা করেছিল প্যাটেল পরিবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বিবিসি গুজরাটিকে জানিয়েছেন, পাঁচ দিন ধরে প্যাটেল পরিবারের খোঁজ না মেলায় তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
ওই ব্যক্তি বলেন, ‘সবাই চিন্তিত ছিলাম। শঙ্কা হচ্ছিল তারা বিপদে পড়েছে কি না। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম।’
এক সংবাদ সম্মেলনে আরসিএমপি কর্মকর্তা রব হিল জানান, ১২ জানুয়ারি উড়োজাহাজে করে প্যাটেল পরিবার কানাডার টরন্টোয় প্রবেশ করে। সেখান থেকে মানিটোবায় যাত্রা করে। তার আগে সীমান্তবর্তী এমারসন শহরে গিয়েছিলেন তারা।
রব হিল বলেন, ‘মরদেহগুলোর ধারে-কাছে কোনো গাড়ি ছিল না। ধারণা করছি, কেউ বা কারা তাদের এখানে রেখে গিয়েছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ঢুকতে বাকি পথ হেঁটে যেতে হতো।’
ডিঙ্গুচার বাসিন্দারা বলছেন, বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা তাদের গ্রামে বেশি। পর্যটক ভিসায় অনেকে বিদেশে থিতু হতে চান।
১৯ জানুয়ারি সীমান্ত থেকে উদ্ধার হওয়া আরও আট ভারতীয়র সঙ্গে এই পরিবারের যোগাযোগ ছিল কি না তা স্পষ্ট করেনি আরসিএমপি।
প্যাটেল পরিবারের মরদেহ যেদিন উদ্ধার হয়, সেদিনই কানাডা সীমান্তে একটি ভ্যানে ১৫ যাত্রী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাসিন্দা স্টিভ সেন্ড নামে এক ব্যক্তি আটক হন । তার বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই ১৫ যাত্রীর সঙ্গে দুজন ভারতীয় ছিলেন।
একই পরিবারের চার সদস্যের ঠান্ডায় জমে মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন ডিঙ্গুচার বাসিন্দারা।
প্রেসিডেন্ট অফ দ্য ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন অফ মানিটোবা রামান্দিপ গ্রেওয়াল বলেন, ‘কিছু একটা ভুল হচ্ছে। তীব্র ঠান্ডায় আঁধারে কেন তারা হেঁটে সীমান্ত পাড়ির চেষ্টা করবে?
‘আমি জেনেছি ওই পরিবার ১১ ঘণ্টা হেঁটেছিল। এই তাপমাত্রায় ১ মিনিটও নিরাপদ স্থান ছাড়া টিকে থাকা সম্ভব নয়।’
ঘটনাটিকে গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আরসিএমপি। তাদের সহায়তা করছে কানাডায় ভারতীয় দূতাবাস। তৎপর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।