বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার, গুম, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে ব্যাপক সোচ্চার দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রকে। তবে দেশটির নাগরিকরাই বছরের পর বছর এ ধরনের অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। অভিযোগ আছে, অনেক ঘটনারই প্রতিকার পান না আমেরিকানরা।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান পুলিশি নির্যাতনের বিষয়টি সামনে আসে ২০২০ সালের ২৫ মে। জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে আটক করার সময় হাঁটু দিয়ে ঘাড় চেপে ধরে তাকে হত্যা করে পুলিশ।
অনলাইনে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ভিডিও ভাইরাল হলে পুলিশি নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারস’ নামের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
এরপরই দেশটিতে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের বিষয়টি সামনে আসে। স্ট্যাটিসটিকায় প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধু গত বছরেই পুলিশের গুলিতে দেশটিতে ৮১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
দেশটিতে গত ৯ বছরে শুধু পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৯ হাজার ৫৮৬ জন। যদিও এই পরিসংখ্যানে ফ্লয়েডের মতো পুলিশি হেফাজতে থাকার সময়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হিসাব রাখা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্রাইম ইনফরমেশন সেন্টারের (এনসিআইসি) তথ্য বলছে, ২০২০ সালেই দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কাছে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ১৮ জন নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ এসেছে।
অবশ্য এফবিআইয়ের ডেটা অনুযায়ী, এর মাঝে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৮৭২টি অভিযোগের সুরাহা হয়েছে। তবে অমীমাংসিত থেকে গেছে ২ হাজার ১৪৬টি অভিযোগ।
১৯৯০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এর মধ্যে ২০২০ সালে সর্বনিম্ন ৫ লাখ নিখোঁজের অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়েছে। এর মাঝে ১৯৯৭ সালে সর্বোচ্চ ৯ লাখ ৮০ হাজার নিখোঁজের অভিযোগ জমা পড়ে কর্তৃপক্ষের কাছে।
২০০৮ সালে বড়দিনের কিছু দিন আগে পৌলা হিলের মেয়ে শিমেকা কোসি নিখোঁজ হন। হারিয়ে যাওয়া শিমেকাকে এখনও খুঁজে ফিরছেন তার মা।
দ্য সেন্টার ফর জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বলপ্রয়োগ ও নির্যাতনের মতো বিষয়ে খুব অল্প ক্ষেত্রেই পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে তদন্তের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেই অর্থে পুলিশি নির্যাতনের বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির ঘটনা ঘটেনি।
২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পুলিশি হত্যাকাণ্ডের ৯৮.৩ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি।
গত বছর ১১ এপ্রিল জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার বিচার চলাকালীন বিচারস্থলের কাছে পুলিশের গুলিতে মারা যান ২০ বছর বয়সী আরেক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ ডন্ট রাইট। পুলিশের দাবি, ডন্ট গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করছিলেন।
৬ আগস্ট নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের রচেস্টার শহরে পুলিশের গুলিতে মারা যান ২৪ বছর বয়সী সিমরান গর্ডন নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ। গর্ডনের স্বজনের অভিযোগ, পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে হত্যা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজন তথ্য দিয়েছে দ্য জার্নালিস্ট'স রিসোর্স। আমেরিকাভিত্তিক এই জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের একজন কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার আশঙ্কা এক হাজার ভাগের এক ভাগ।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় দেশটিতে গুলিতে মারা যান আড়াইগুণ বেশি কৃষ্ণাঙ্গ।
এত ঘটনা ও অভিযোগ, এমনকি পরিসংখ্যানের পরেও নিজ দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা হতাশাজনক বলে মনে করছে দেশটির বিভিন্ন সংগঠন।