অনেক উন্নত দেশেরই ঝলমলে বর্তমানের পেছনে রয়েছে গাঢ় অন্ধকার। অনেক দেশই অতীতে এলাকার দখল নিতে সেখানকার আদিবাসীদের উচ্ছেদ করেছে কিংবা আফ্রিকা থেকে নিয়ে এসেছে ক্রীতদাস। কানাডাও এর বাইরে নয়। দেশটি একসময় সেখানকার আদিবাসী যারা প্রায় ৬ হাজার ৫০০ বছর আগে থেকে বসবাস করছিল, তাদের শিশুদের সভ্য করার নামে আবাসিক স্কুলে নিয়ে আসতো। জোরপূর্বক কেড়ে নেয়া হতো ভাষা ও সংস্কৃতি।
এই আবাসিক স্কুলের চাপ সহ্য করতে না পেরেই প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার শিশু। গত বছরেও নামবিহীন প্রায় ২১৫টি কবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবার নতুন করে নাম-পরিচয়হীন আরও অনেকগুলো কবরের সন্ধান পেয়েছে কানাডার আদিবাসী সম্প্রদায়।
উইলিয়াম লেক ফার্স্ট নেশন সোমবার জানিয়েছে, ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ৯৩টি কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
কানাডার পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য ব্রিটিশ কলম্বিয়ার প্রাক্তন কামলপস ইন্ডিয়ান আবাসিক স্কুল বা সেন্ট জোসেফ আবাসিক স্কুলের এলাকায় এই কবরগুলো পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই কবরগুলো সেন্ট জোসেফ আবাসিক স্কুলের ছাত্রদেরই।
প্রায় হাজার হাজার উইলিয়াম লেক ফার্স্ট নেশন ও অন্যান্য আদিবাসী শিশুদের জোরপূর্বক সেন্ট জোসেফ স্কুলে রাখা হয়েছিল। এই স্কুলটি ১৮৮১-১৯৮১ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।
গত বছর মে মাসেও এই আবাসিক স্কুলের আশপাশে প্রায় ২১৫টি নামবিহীন কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
কানাডা ১ লাখ ৫০ হাজার আদিবাসী শিশুকে ১৮০০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জোরপূর্বক আবাসিক স্কুলে যোগদানে বাধ্য করেছিল।
সেখানে শিশুদের থেকে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল, ভাই-বোন থেকেও আলাদা করা হয়েছিল এবং এসব শিশু মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকারও হয়েছিল।
হাজার হাজার শিশু মারা গিয়েছিল এমন পরিস্থিতি সহ্য করতে না পেরে।
বিভিন্ন গীর্জা বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিক চার্চ এই স্কুলগুলো পরিচালনা করতেন।
২০১৫ সালে দেশটির ফেডারেল কমিশনও তদন্তের পর এ ঘটনার সত্যতা পায়। তারা কানাডার আবাসিক স্কুল পদ্ধতিকে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ চালানোর দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
এই মাসের শুরুর দিকে কানাডার ফেডারেল সরকার উইলিয়াম লেক ফার্স্ট নেশনের জন্য ১.৯ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার তহবিল ঘোষণা করে, যাতে তারা প্রাক্তন আবাসিক স্কুলগুলোর সঙ্গে যুক্ত সমাধিগুলো নিয়ে তদন্ত করতে পারে।
সর্বোপরি নতুন এই কবরগুলো খুঁজে পাওয়ায়, জোরপূর্বক-আত্মীকরণ প্রতিষ্ঠানের শিকার হওয়া এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি আরও জোরালো হয়েছে।