মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছে বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমে। আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ে কিংবা পার্শ্ববর্তী ছায়াপথ এন্ড্রোমিডা অথবা আমরা জানালা খুললে আকাশে যে নক্ষত্র দেখি, তার সবই উৎপত্তি বিগ ব্যাং-এর পরে।
এমনকি আমরা সময় বলতে যা বুঝি তারও জন্ম বিগ ব্যাং-এর ফলে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, আজ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং হওয়ার ফলে মহাবিশ্ব জন্মলাভ করে। বিগ ব্যাং সংগঠিত হওয়ার একদম শুরুর দিকে স্থান ও সময়ের শুরুতে যে ছায়াপথগুলো জন্মলাভ করে সেগুলোর সাধারণত কসমিক ডাউন (মহাজাগতিক ভোর) সময়কার ছায়াপথ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
অর্থাৎ কসমিক ডাউন ছায়াপথগুলোর জন্ম সময়ের উৎপত্তির একেবারে প্রান্তে।
এবার ভাইসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থান ও সময়ের প্রান্তে জন্মলাভ করা এমন নতুন দুটি ছায়াপথ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। যাদের উৎপত্তি হয়েছিল মহাবিশ্ব সৃষ্টির ৮০ কোটি বছর পরে।
এই দুটি ছায়াপথ এত দিন মহাজাগতিক ধূলিকণার মেঘের আড়ালে লুকিয়ে ছিল। কোনো সন্দেহ নেই, এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা মহাজগতের শুরুর দিকের নক্ষত্র ও ছায়াপথগুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারবে।
জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জোতির্বিজ্ঞানী ইয়োশিনোবু ফুদামোটো এবং জাপানের জাতীয় জোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (নাওজি) নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা প্রতিবেশী ছায়াপথগুলোর ওপর নজর রাখার সময় দুর্ঘটনাক্রমে দুটি ছায়াপথ থেকে আলাদা ধরনের বর্ণালি সংকেত দেখতে পান, স্বাভাবিক অতিবেগুনি রশ্মি (আলট্রা ভায়োলেট রে) থেকে অনেক বেশি উজ্জ্বল ছিল।
দলটি বলছে, ‘আমাদের গ্যালাক্সির উৎপত্তির সময়কে গণনা করার জন্য যে মাপকাঠি (অতিবেগুনি রশ্বিভিত্তিক) রয়েছে তা অসম্পূর্ণ।
২০১৯ সালের নভেম্বরে, ফুডোমোটো এবং তার সহকর্মীরা চিলির একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ইন্টারফেরোমিটার অ্যাটাকামা লার্জ মিলিমিটার/ সাবমিলিমিটার অ্যারে (এএলএমএ) মহাবিশ্বের আদিম ছায়াপথগুলো পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
ফুডোমোটো ও তার সহকর্মীরা কাজ করেন রি-আয়োনাইজেশন-ইরা ব্রাইট ইমিশন লাইন সারভে (রেবেলস) নামের একটি প্রকল্পে। এই প্রকল্পের অধীনে তারা কসমিক ডাউনের সময়কার প্রায় ৪০টি ছায়াপথ নিয়ে অধ্যয়ন করছিলেন।
দলটি রেবেলেস-১২ ও রেবেলস-২৯ নামের দুটি ছায়াপথ পরীক্ষা করার সময় তারা কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত দুটি নক্ষত্রের নিদর্শন উজ্জ্বল বর্ণালি সংকেত দেখতে পায়।
জোতির্বিজ্ঞানীরা সদ্য আবিষ্কৃত দুটি ছায়াপথের নাম দিয়েছেন রেবেলস-১২-২ এবং রেবেলস-২৯-২।
ধারণা করা হচ্ছে, মহাজাগতিক ধুলার আড়ালে কসমিক ডাউনের আরো পাঁচটি ছায়াপথ লুকিয়ে আছে।
ভাগ্যক্রমে আবিষ্কার হওয়া এই নতুন দুটি ছায়াপথের পরে জোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা মহাজাগতিক ধূলিকণার মেঘের আড়ালে কসমিক ডাউন যুগের আরও পাঁচটি ছায়াপথের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা জোর দিচ্ছেন মহাজাগতিক মেঘসমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর দিকে।