আত্মাহুতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ইহুদি উপাসনালয়ে (সিনাগগ) জিম্মিকারী মালিক ফয়সাল আকরাম। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে শেষ ফোন কলে এই ইচ্ছার কথা নিজের ভাইকে জানান তিনি। সম্প্রতি পরিবারের সঙ্গে তার শেষ ফোনালাপ প্রকাশ হয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইহুদি সম্প্রদায়ের লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক জুইশ ক্রনিকল ওই ফোনালাপটি প্রকাশ করেছে।
এতে আকরামকে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। ফয়সালের পরিবার থাকে ইংল্যান্ডের ব্ল্যাকবার্ন এলাকায়।
ফোনে আকরামের ভাই গুলবার তাকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন। বলেছিলেন, যাদের জিম্মি করা হয়েছে, তারা নিরপরাধ। এসব মানুষের সন্তানদের কথা চিন্তা করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন গুলবার।
জবাবে আকরাম বলেন, ‘শহীদ হয়ে মর’।
তারপর তিনি আবার বলেন, ‘আমি দুই সপ্তাহ ধরে এখানে আছি। সবাই এখন আমার বন্দুকের নিশানায়। আমি বাড়ি ফিরব, তবে বডি ব্যাগে করে।’
আকরাম আরও বলেন, ‘দুই বছর ধরে এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম।’
জুইশ ক্রনিকলের প্রতিবেদন বলছে, উপাসনালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে ফোনালাপের এই অডিও ক্লিপটি পেয়েছেন তারা। এটির সত্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বিবিসি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অডিওটি আসল।
ডালাসের কোলিভিলে ১৫ জানুয়ারি স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে কংগ্রেগেসন বেথ ইসরায়েল সিনাগগে প্রার্থনা চলার সময় আকরাম চারজনকে জিম্মি করেন।
কংগ্রেগেসন বেথ ইসরায়েল সিনাগগে জিম্মিকাণ্ড ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত ওই প্রার্থনার মধ্যে আকরামকে উচ্চ স্বরে কথা বলতে শোনা যায় ‘ফোনে আমার বোনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দাও। আমি মারা যাব।
‘আমেরিকা কিছু ভুল করেছে।’
এর পরপরই লাইভ ফিড বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। স্থানীয়দের নিরাপদে সরিয়ে নেন তারা। এরপর থেমে থেমে বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়। চলে সমঝোতার চেষ্টাও।
৬ ঘণ্টা পর একজনকে ছেড়ে দেন জিম্মিকারী। এর কয়েক ঘণ্টা পর বাকিদেরও মুক্ত করে দেয়া হয়। তারা সবাই অক্ষত ছিলেন। পরে এফবিআইয়ের অভিযানে মারা পড়েন আকরাম।
উপাসনালয়টি ঘিরে রেখেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। ছবি: এএফপি
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত এক যুগলকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ম্যানচেস্টার থেকে তাদের আটকের কথা জানায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ চলায় এই তরুণ-তরুণীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
যেভাবে বোকা হলেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা
আকরাম তার শেষ ফোন কলে জানিয়েছিলেন, দুই বছর ধরে এমন কিছুর পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। তার আচরণে সন্দেহ হয়েছিল গোয়েন্দাদের। ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থা ২০২০ সালে তাকে ‘সাবজেক্ট অফ ইন্টারেস্ট’ তালিকায় রেখেছিল। ৯ মাসের বেশি সময় ধরে চলা নজরদারির পর হাল ছেড়ে দেন তারা।
আকরামকে নিয়ে তদন্ত চালিয়েছিল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী এমআই-সিক্স। ১৮ মাসে তাদেরও ধোঁকা দিয়েছেন নিপুণ দক্ষতায়। ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকায় ২০২১ সালে ‘সাবজেক্ট অফ ইন্টারেস্ট’ তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় আকরামকে।
জিম্মিকাণ্ড অবসানের পর এফবিআইয়ের ব্রিফিং। ছবি: এএফপি
এই সুযোগটাই যেন খুঁজছিলেন আকরাম। চলতি মাসের শুরুতে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর দিয়ে নিউ ইয়র্ক প্রবেশ করেন আকরাম। ধারণা করা হচ্ছে, নিউ ইয়র্কের কোনো দোকান থেকেই অস্ত্রটি কিনেছিলেন তিনি।
আকরামের পরিবারের প্রতিক্রিয়া
যাদের জিম্মি করা হয়েছিল, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আকরামের ভাই গুলবার। জানিয়েছেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি।
ব্ল্যাকবার্নে থাকা আকরামের এক বন্ধু জানান, আচমকা ওর যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। ওকে তখন ভীষণ অস্থির দেখাচ্ছিল।
কে এই বোন
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, আফিয়া সিদ্দিকি নামে এক পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানীর মুক্তি দাবি করেন আকরাম। আফগানিস্তানে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হত্যাচেষ্টার দায়ে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন আফিয়া। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে আছেন।
এর আগে ২০১২ সালে সিরিয়ায় অপহৃত এক আমেরিকান সাংবাদিকের বিনিময়ে আফিয়ার মুক্তি দাবি করেছিল আইএস।
যদিও আফিয়ার আইনজীবী সিএনএনকে জানিয়েছিলেন, আকরাম আফিয়ার ভাই নয়। আফিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে এই জিম্মির ঘটনার নিন্দা জানানো হয়।