ডেনমার্কের নারী ফুটবলের সবচেয়ে আলোচিত মুখ এখন নাদিয়া নাদিম। অথচ জন্মসূত্রে তিনি একজন আফগান। জন্মেছিলেন হেরাত প্রদেশে।
তার বাবা ছিলেন আফগান সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল। তালেবান যখন প্রথম দেশটিতে ক্ষমতায় আসে। সে সময় ২০০০ সালে এক প্রহসনের বিচারে তার বাবাকে হত্যা করা হয়। তখন নাদিয়ার বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর।
তালেবানদের ক্রমশ চাপ প্রয়োগে সে সময় তার পরিবার আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে ডেনমার্কে আশ্রয় নেয়।
এ রকম একটি পারিবারিক পরিস্থিতিকে সঙ্গে নিয়ে আজ তিনি একজন অনুপ্রেরণা দানকারী নারী ক্রীড়াবিদ। শৈশবেই তিনি ভেঙে পড়তে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে ফুটবলকেই বেছে নিয়েছেন। হয়েছেন সর্বকালের সেরা আফগান নারী ফুটবলার।
শুধু ফুটবলই নয়, ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানেও ডিগ্রি নিয়েছেন। কথা বলতে পারেন ১১টি ভাষায়। লিখেছেন নিজের আত্মজীবনী।
অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম আমার কিছু বলা উচিত। এমন কিছু, যা আমি বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই। আমার যাত্রা আমাকে পৃথিবীর অনেক জায়গায় নিয়ে গেছে। সম্ভবত এই যাত্রায় শামিল হওয়া আপনার জন্য উপভোগ্য হবে।
ইন্ডিয়া.কমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেনমার্ক জাতীয় দলের হয়ে ৫ ফিট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার দীর্ঘকায় স্ট্রাইকার নাদিয়া খেলেছেন ৯৯টি ম্যাচ। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলে করেছেন ২০০টি গোল। চুক্তি ছিল ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবের সঙ্গে।
ডেনমার্কের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ২০১৭ সালে হন নাইকির শুভেচ্ছা দূত। ফোর্বসও তাকে প্রভাবশালী নারী ক্রীড়াবিদের তালিকায় ২০তম স্থান দিয়েছিল।
৩৪ বছর বয়সী নাদিয়া নাদিম বর্তমানে নারী ফুটবলের সবচেয়ে দামি ফুটবলারদের একজন।
অথচ অনেক প্রস্তাবই তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। যদি তা না করতেন, তিনি হতে পারতেন সবচেয়ে দামি নারী ফুটবলার।
নাদিয়া নাদিম সব সময়ই বলেন, তিনি অর্থের জন্য ফুটবল খেলেন না। ভবিষ্যতে ডাক্তারি করেই এর থেকে বেশি অর্থ তিনি রোজগার করতে পারবেন। তিনি ফুটবল খেলেন, খেলাটিকে ভালোবেসে।
সর্বশেষ তার ঘটনাবহুল জীবন নিয়ে ডেনীয় ভাষায় লিখেছেন বই। নাম দিয়েছেন ‘মন হিস্টোইরি’। ডেনীয় ভাষা ‘মন হিস্টোইরি’র বাংলা মানে হলো ‘আমার গল্প’। অ্যামাজন, কিন্ডলের মত প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাচ্ছে তার বই।
তার আত্মজীবনী সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম আমার কিছু বলা উচিত। এমন কিছু, যা আমি বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই। আমার যাত্রা আমাকে পৃথিবীর অনেক জায়গায় নিয়ে গেছে। সম্ভবত এই যাত্রায় শামিল হওয়া আপনার জন্য উপভোগ্য হবে।’
তালেবান তার পিতাকে হত্যা করেছে, হুমকির মুখে ছেড়েছেন দেশ। হার মানেননি। ক্রমাগত নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন নাদিয়া নাদিম। তার এ যাত্রা যে রোমাঞ্চকর ও বেদনার, হারানোর ও প্রাপ্তির, এতে কোনো সন্দেহ নেই।