নতুন বছরের প্রথম দিনই ফ্রান্সে পারিবারিক সহিংসতায় দেশটির ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মারা গেছেন তিন নারী। এ ঘটনায় নারীবাদীদের সংগঠন নু তুত (আমরা সবাই) সরকারের নীরবতাকেই দায়ী করেছে।
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে জানা যায়, নতুন বছরের শুরুর দিনে ফ্রান্সের তিনটি শহরে পারিবারিক সহিংসতায় তিনজন নারী তার পুরুষ সঙ্গীর আঘাতে প্রাণ হারান।
এর মাঝে একজনের মরদেহ দেশটির পূর্বাঞ্চলের মুখতে মুসেল শহরে পাওয়া যায়। তার শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। ৫৬ বছর বয়সী ওই নারীর ৫০ বছর বয়সী সঙ্গীই তাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
ফ্রান্সের নিস শহরের ৪৬ বছর বয়সী আরেক নারীকে হত্যা করেন তার স্বামীই। গাড়ির ভেতর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পশ্চিম ফ্রান্সের সাউমুর শহরে পৃথক আরেকটি ঘটনায় ২৭ বছর বয়সী এক নারী সৈনিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার শরীরে ছুরির আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তার ২১ বছর বয়সী পুরুষ সঙ্গীকে আটক করেছে পুলিশ।
দেশটির নারীবাদীদের অভিযোগ, যখন পুরো দেশবাসী নতুন বছরকে বরণ করে নিতে উৎসবের আমেজে আছে, ঠিক সেই সময়ই তিনজন মানুষকে প্রাণ দিতে হলো শুধু নারী হওয়ার অপরাধে।
নারীবাদীদের সংগঠন নু তুত এ ধরনের ঘটনা ঘটার জন্য প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রন ও সরকারের নীরবতাকেই দায়ী করেছেন। পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীদের রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার, এমনটাই অভিযোগ তাদের।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জিম কাস্তেক্স পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি পার্লামেন্টকে জানিয়েছেন, শুধু ২০২১ সালেই দেশটিতে শতাধিক নারী হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
নারীবাদী সংগঠন নু তুতও এমনটাই জানাচ্ছে, তাদের দাবি ২০২১-এ ১১৩ নারী খুন হন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সঙ্গী বা সাবেক সঙ্গীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এদিকে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, নারী হত্যা বন্ধে দেশটি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
কাস্তেক্স জানিয়েছেন, নারীদের সুরক্ষার জন্য সরকার ২৪ ঘণ্টার হটলাইন সেবা চালু করেছে। এ ছাড়া প্রায় ৯০ হাজার পুলিশ সদস্যকে নারীদের অভিযোগের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া তিনি জানিয়েছেন, শুধু পারিবারিক সহিংসতার থেকে নারীদের সুরক্ষার জন্য প্রতি বছর সরকার ১ বিলিয়ন ইউরো খরচ করবে।
তবে নারী অধিকার কর্মীদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। ফলে মাঠপর্যায়ে ফল পাওয়া যাচ্ছে না।