বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনা মহামারির ‘প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন’ ওমিক্রন

  •    
  • ১ জানুয়ারি, ২০২২ ১০:২৩

বিশেষজ্ঞ বলছেন, ওমিক্রন নামের যে ভ্যারিয়েন্ট নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে, সেটি মানবস্বাস্থ্যের জন্য শাপেবর হতে পারে। এটি মানবদেহে প্রাকৃতিক ভ্যাকসিনের কাজ করতে পারে।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বজুড়ে নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে। দেশে দেশে উচ্চহারে সংক্রমণ ঘটছে ওমিক্রনের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই ধরনটি সারা বিশ্বের জন্য ‘প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন’ হতে পারে। আর এর মাধ্যমেই শেষ হতে পারে করোনা মহামারি।

বিশেষজ্ঞ বলছেন, ওমিক্রন নামের যে ভ্যারিয়েন্ট নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে, সেটি মানবস্বাস্থ্যের জন্য শাপেবর হতে পারে। এটি মানবদেহে প্রাকৃতিক ভ্যাকসিনের কাজ করতে পারে।

অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এর বিরোধী মতও আছে।

রিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট বিভাগের অধ্যাপক ইয়ান জোন্স বলেন, ‘ওমিক্রন একটি প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন হওয়ার ধারণা সঠিক হিসেবে ধরে নেয়া যায়। এমন ধারণার পেছনের যুক্তি হলো, ওমিক্রন অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমণযোগ্য একটি ধরন।’

এই ভাইরাস বিশেষজ্ঞের মতে, করোনার প্রভাব অন্যান্য ধরনের তুলনায় মৃদু। তাই এটি গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি না করে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এতে করে বিপুলসংখ্যক মানুষের দেহে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হবে।

আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ওমিক্রন সংক্রমিত রোগীদের থেকে নেয়া রক্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংস্পর্শে এলে অ্যান্টিবডি ৪ দশমিক ৪ গুণ বেড়ে যায়।

বিপরীতে অন্যান্য গবেষণায় ক্রস-ভ্যারিয়েন্ট ইমিউনিটির বিষয়ে দেখা গেছে যে, ডেল্টার প্রতিক্রিয়ায় তৈরি অ্যান্টিবডিগুলো ওমিক্রনের প্রতি খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।

অধ্যাপক জোন্স দ্য মেইল অনলাইনকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে করোনার আরও যেসব ধরন আসবে, সেগুলো আরও বেশি হালকা হতে পারে। আর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী প্রাপ্তবয়স্কদের বুস্টার ডোজ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা শিগগিরই কমে আসতে পারে।

‘ওমিক্রন যদি একটি ক্ষয়প্রাপ্ত স্ট্রেইন হয়ে থাকে, তবে পরবর্তী সংস্করণগুলো আরও হালকা হতে পারে। অন্যথায় উপযুক্ত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে আসতে পারে।’

ভাইরাসের বিবর্তন একটি কম গুরুতর স্ট্রেনের দিকে ঝুঁকবে, যা আপনি ওই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে করতেই জয়ী হবেন। যেসব আমরা সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য করি।’

অধ্যাপক জোনস বলেন, ‘ওমিক্রনকে অতি সংক্রমণের একটি প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন হিসেবে বর্ণনা করাটা সঠিক। ওমিক্রন অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য হলেও মানুষকে ব্যাপকভাবে অসুস্থ করে তোলার মাপকাঠিতে এর প্রভাব মৃদু।

‘আপনি করোনার যে ধরনেই সংক্রমিত হোন না কেন তাতে আপনার দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ওমিক্রনকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে পারি। কারণ এর মাধ্যমে আমরা ঝুঁকি ছাড়াই বা অনেক কম ঝুঁকি নিয়েও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা পেতে পারি।’

কোভিডের মহামারি পর্যায়ে আফ্রিকায় ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর সাউথ আফ্রিকায় একটি গবেষণা তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। সাউথ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি) এবং প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা গবেষণাটি চালান। তাতে বলা হয়, ওমিক্রনে প্রাণহানি অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট বৃদ্ধির সময় দেখা মাত্রার মাত্র এক-চতুর্থাংশ।

গবেষকরা ৪৫০ জন রোগীর রেকর্ড পরীক্ষা করে জানান, গত মাসে কোভিড নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মাত্র ৪.৫ শতাংশ মারা গেছে। অথচ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের সময়ে মৃত্যুর হার ছিল ২১ দশমিক ৩ শতাংশ।

গবেষক দলটির এই প্রতিবেদন একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, করোনা মহামারির অন্ধকারতম দিনগুলোর ‘শেষের আশ্রয়দাতা’ হতে পারে এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট।

এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা বিষয়টিতে ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেন। তাদের দাবি, ওমিক্রন প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন হিসেবে কাজ করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের একজন ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রদীপ আওয়াতে। প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন যদিও ডেল্টার চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তবে খুব কমসংখ্যক রোগীকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। যদি এটি-ই ঘটে, তাহলে ওমিক্রন একটি প্রাকৃতিক টিকা হিসেবে কাজ করবে।’

রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট সাইমন ক্লার্ক ওমিক্রনকে ‘প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন’ লেবেল দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে আমাদের যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে তা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ততটা ভালোভাবে কাজ করে না। তাই এটি অন্যদিকে কাজ করে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। ভাইরাল বিবর্তন সাধারণ সর্দি-কাশির একমুখী রাস্তা- এমন ধারণা হবে চরম গোঁয়ারতুর্মি।’

বুস্টার ডোজ নিয়ে বিতর্ক

ইউরোপ-আমেরিকাসহ দেশে দেশে বুস্টার ডোজ দেয়ার তোড়জোড় চলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন বুস্টার দেয়া বন্ধ রাখা উচিত এবং যেসব টিকা দেয়া হয়েছে সেগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে ডেটার জন্য অপেক্ষা করা উচিত।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অতিরিক্ত টিকা দেয়ার দিকে এগোচ্ছে। তবে প্রতি তিন মাস অন্তর একটি বুস্টার দেয়া সম্ভব নয়। ফল উল্লেখযোগ্য নাও হতে পারে।

ইসরায়েল ইতিমধ্যে তাদের করোনা ভ্যাকসিনের চতুর্থ ডোজ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিজ দেশে চতুর্থ ডোজ শুরু করা নিয়ে এক ধরনের চাপের মুখে পড়বে। যদিও এ দুটি দেশই জোর দিয়ে বলেছে, এখনও চতুর্থ ডোজ পরিচালনার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

বিজ্ঞানীরা যুক্তি দেন যে, প্রতি তিন থেকে চার মাস অন্তর ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব নয়। আর দ্রুত সংক্রমনশীল ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে এটির প্রয়োজন নাও হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা চতুর্থ ডোজ শুরুর আগে দুটি ডোজের মাঝের সময়ের ব্যবধান এবং টিকার কার্যকারিতার আরও ডেটা সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছেন।

কিছু বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা কমিয়ে আনাকে টিকার বুস্টার ডোজ দেয়ার উদ্দেশ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রফেসর জোন্স বলেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকালীন অসুস্থতা মৌসুমের আগে দুর্বলদের জন্য বার্ষিক বুস্টার ডোজ আরও অর্থবহ হবে।

ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক লরেন্স ইয়ং বলেন, ভ্যাকসিনগুলোর বুস্টার ডোজ সংক্রমিত বা অসুস্থ হওয়ার থেকে অনেক বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থতা থেকে রক্ষায় ব্যবহার করা উচিত।

সাইমন ক্লার্ক বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে প্রতি তিন মাস অন্তর বুস্টার ডোজ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। টিকা গ্রহণের আড়াই মাস পর থেকে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তার মানে এই নয় যে, এটি অত্যন্ত কার্যকর হওয়ার নিচে নেমে গেছে। বুস্টারগুলোর দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা পরিমাপ করার একমাত্র উপায় ছিল অপেক্ষা করা এবং আমরা কেবল দীর্ঘমেয়াদি পর্যালোচনায় ডেটা পেতে পারি।’

এ বিভাগের আরো খবর