নাবালিকাদের যৌন নিগ্রহে অভিযুক্ত ছিলেন আমেরিকান অভিজাত সমাজের নারী ঘিসলাইন। গত বৃহস্পতিবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। এবার রায়ের অপেক্ষা।
নিউইয়র্কের একটি আদালতে আলোচিত এই মামলাটির বিচার চলার সময় ব্রুকলিনের একটি কুখ্যাত কারাগারে বন্দি ছিলেন ঘিসলাইন। আমেরিকান বিলিয়নিয়ার জেফরি অ্যাপস্টেইনের সাবেক প্রেমিকা হিসেবেই এখন বেশি পরিচিত তিনি। যদিও তার জন্ম আর বেড়ে ওঠা নামকরা এক ব্রিটিশ পরিবারে।
ব্রিটিশ মিডিয়া মুগল রবার্ট ম্যাক্সওয়েল ছিলেন তার বাবা। সেই সুবাদে শৈশব থেকেই সম্ভ্রান্ত আর ঈর্শ্বনীয় জীবন ছিল এই ধনির দুলালির। সমাজের উঁচু মহলে তিনি ছিলেন বহুল কাঙ্ক্ষিত এক নারী। মেলামেশাও করেছেন পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু মানুষের সঙ্গে। সেই সুবাদেই ‘সোসাইটি গার্লফ্রেন্ড’ এর তকমা পান তিনি। বাবার মৃত্যুর পর হয়ে যান আরও ছন্নছাড়া।
বাবা রবার্ট ম্যাক্সওয়েলের ছবি হাতে ঘিসলাইন
১৯৯১ সালে বাবা রবার্টের মৃত্যু হলে, ভাগ্যান্বেষনে একেবারে শূন্য হাতে আমেরিকার মাটিতে পা রেখেছিলেন আলোচিত এই নারী। তারপরই পরিচয় হয় বিলিয়নিয়ার জেফরি অ্যাপস্টেইনের সঙ্গে।
বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হলেও ক্ষমতাবান মানুষেদের সঙ্গে খুব বেশি যোগাযোগ ছিল না অ্যাপস্টেইনের। তাই ৯০ এর দশকে আমেরিকার রোমাঞ্চকর দিনগুলোতে অ্যাপস্টেইনকে ক্ষমতাবান মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিতেন তিনি। এমন ক্ষমবান মানুষের তালিকায় আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুও রয়েছেন।
অ্যাপস্টেইনের সঙ্গে আরও একটি বিষয়ে ঐক্যমত ছিল ঘিসলাইনের। অ্যাপস্টেইনের মনোরঞ্জনের জন্য খুঁজে খুঁজে কম বয়সী মেয়েদের সরবরাহ করতেন। যৌন নিপীড়ক ছিলেন নিজেও। সেই সুবাদেই বিচ্ছেদের পরও দুজনের মধ্যে যোগাযোগ আর লেনদেন থেকেই গিয়েছিল।
আমেরিকান বিলিয়নিয়ার জেফরি অ্যাপস্টেইনের সঙ্গে
ধর্ষণ আর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে ২০১৯ সালে বিচার চলার সময় কারাগারের ভেতর আত্মহত্যা করেন অ্যাপস্টেইন। তার সঙ্গে যোগসূত্রের কারণে একই অভিযোগে ২০২০ সালে গ্রেপ্তার করা হয় ঘিসলাইনকে।
নির্যাতিত নাবালিকাদের যৌনদাসী হিসেবে আটকে রাখারও অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।
এক ভুক্তভোগী দাবি করেছেন, ১৪ বছর বয়সে ঘিসলাইন তাকে দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করিয়েছিলেন। পরে জেফরি অ্যাপস্টেইনও জোর করে তার সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হন।
ধারণা করা হচ্ছে, নাবালিকাদের পাচারের জন্য ৪০ বছরের জেল হতে পারে ঘিসলাইনের। ১৯৯৪ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যেই অধপতনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার চলার সময় ব্রুকলিনের কুখ্যাত এমডিসি কারাগারে থাকলেও রায়ের পর বাকী জীবনের জন্য তার স্থায়ী ঠিকানা হতে পারে কানেক্টিকাটের বিখ্যাত ড্যানবারি কারাগারে।
কারা বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ১৭ মাস ধরে ব্রুকলিনের যে কারাগারটিতে ঘিসলাইন ছিলেন, এর সঙ্গে তুলনা করলে কানেক্টিকাটের সেই কেন্দ্রীয় কারাগারটি হবে ডিজনিল্যান্ডের মতো।
১৯৪০ সালে স্থাপিত ডানবারির সেই কারাগারে আরও অনেক বিখ্যাত মানুষের ঠাঁই হয়েছিল। এর মধ্যে গায়িকা লরিন হিল, রিয়ালিটি টিভি স্টার তেরেসা জিউডিস আর ‘অরেঞ্জ ইজ দ্য নিউ ব্ল্যাক’ এর লেখিকা পিপার কারম্যান অন্যতম।
অনেক উপর থেকে তোলা একটি ছবিতে কারাগারটির নান্দনিক বিন্যাসের কিছুটা বোঝা যায়। এর ভেতরে আছে দৌড়ানোর জন্য আলাদা ট্র্যাক, বেসবল খেলার মাঠ। আছে সুবিন্যস্ত গাছপালার সারি আর পায়ে চলার পথ।
বন্দিদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী সময় কাটানোর অসংখ্য উপকরণ আছে ওই কারাগারে। কেউ চাইলে সেখানে গান কিংবা অন্য কোনো শখের বিষয় নিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারবে। শারীরিক নানা নৈপুন্যের প্রশিক্ষণও নেয়া যাবে সেখানে।
বিচার চলার সময় ব্রুকলিনের কারাগার নিয়ে বেশ আপত্তি ছিল ঘিসলাইনের পরিবারের। এক বিশেষজ্ঞের মতে, সেই কারাগার থেকে নতুন কারাগারে গেলে, তা ঘিসলাইনের জন্য হবে একটি লটারি জেতার মতো বিষয়।