উৎসব উদযাপনে আতশবাজির দুই হাজার বছরের আধিপত্য এবার খর্ব হতে চলেছে ড্রোনের কারণে। আতশবাজিকে পাশ কাটিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ড্রোন বা উড়ন্ত রোবটের সাহায্যে করা আলোক উৎসব।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বিশ্ব। শব্দ আর আলোর ঝলকানিতে নতুন সালকে বরণ করে নিতে মুখিয়ে নানা প্রান্তের মানুষ। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের আয়োজনে আতশবাজি ছাপিয়ে উদযাপনের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে ড্রোনের আলোক উৎসব।
এর ইঙ্গিত অবশ্য চলতি বছরে টোকিও অলিম্পিকে দেখা গেছে। ড্রোনের সাহায্যে আলোর চোখ ধাঁধানো খেলায় মুগ্ধ হয়েছিল গোটা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় আয়োজন ডালাসের রিইউনিয়ন টাওয়ারে এবার আতশবাজির সঙ্গে ড্রোনের যৌথ আলোক উৎসবের মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হবে ২০২২ সালকে। স্থানীয় পর্যায়েও এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান-এর অনলাইন সংস্করণে এ কথা বলা হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম বড় ড্রোন লাইট শো প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়েটিভ কো-অর্ডিনেটর ওলি হোয়েট বলেন, ‘গত বছর লন্ডনে নতুন বছর বরণ আয়োজনে ৩০০টি ড্রোন দিয়ে আলোক উৎসব করেছিলাম। এই চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, বিশেষ করে করোনা মহামারিতে ড্রোনের চাহিদা বেড়েছে, কারণ দূর থেকে দীর্ঘ সময় এটিকে ওড়ানো যায়।’
ওলি হোয়েটের পার্টনার রবার্ট নেফ। তিনি বলেন, ‘ড্রোনের আলোক প্রদর্শনী এখন বেশির ভাগ জায়গায় দেখা যায়। উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে এটি।’
নেফ বলেন, ড্রোন বেছে নেয়ার কিছু কারণ আছে। আতশবাজিতে নেতিবাচক প্রভাব আছে। বন্যপ্রাণী থেকে পাখি… এমনকি পোষা কুকুর-বিড়ালের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ে।’
ওলি হোয়েট বলেন, ‘ড্রোন ব্যবহারে সুবিধা অনেক। এটি থেকে কিছু নির্গত হয় না, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য। আকাশ থেকে ধ্বংসাবশেষ ফিরে আসার আশঙ্কাও নেই।'
টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী আয়োজনে ড্রোনের সাহায্যে আলোক উৎসব। ছবি: সংগৃহীত
তবে হোয়েটের সঙ্গে সবাই যে একমত, তা নয়। ব্রিটিশ ফায়ারওয়ার্কস অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বলছেন, ‘প্রকৃতিতে নানা হুমকির কারণ হতে পারে ড্রোন। পরিবেশে ড্রোনের ক্ষতিকর প্রভাব কম হলেও এর বৈদ্যুতিক চাহিদা উদ্বেগজনক। লিথিয়ামের ব্যাটারি খুব একটা পরিবেশবান্ধব নয়।
‘আসলে ফায়ারওয়ার্কসের কারণে পরিবেশে যে ক্ষতি হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় এই আয়োজনে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষের কারণে। তারা যে গাড়িতে চড়ে উৎসবস্থলে আসেন, তাতে যে পরিমাণ জ্বালানি পোড়ে, তা পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।’
রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলেটি টু অ্যানিমেলসের (আরএসপিসিএ) মুখপাত্র বলেন, ‘ড্রোনে নেতিবাচক প্রভাব নেই, তা বলা যাবে না। এটি প্রাণিকুলের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণ হতে পারে। আকাশে উড়ন্ত পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে। জনসাধারণের বিরক্তির কারণও হতে পারে। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত। এ ছাড়া ড্রোনের সাহায্যে আলোক প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে নিরাপত্তাও একটা বড় ইস্যু।’
অনেকে বলছেন, আতশবাজি আর ড্রোন একে অন্যের বিকল্প হতে পারে না। তবে এই যুক্তির বিপক্ষের লোকজন বলছেন, আতশের মাধ্যমে দারুণ সব প্রদর্শনী করা গেলেও ড্রোনের সাহায্যে বিভিন্ন ছবি ব্যবহার করে উদযাপনের পুরো চিত্র তুলে ধরা যায়।