হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের তিয়েনআনমেন ঘটনায় নির্মিত একটি ভাস্কর্য অপসারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এর নির্মাতা ডেনমার্কের ভাস্কর জেন্স গ্যালকিওটের আপত্তি সত্ত্বেও এটি সরিয়ে ফেলা হয়।
তিয়েনআনমেন স্কয়ারে নিহত গণতান্ত্রিক আন্দোলনকর্মীদের স্মরণ করে ভাস্কর গ্যালকিওট এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন। ৮ মিটার লম্বা (২৬ ফিট) ভাস্কর্যটিকে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ বলে ডাকা হতো।
বেইজিং-এর তিয়েনআনম্যান স্কয়ারে ১৯৮৯ সালে ছাত্ররা জড়ো হয়েছিল গণতন্ত্রের দাবিতে। কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে সে সময় গণতন্ত্রকামীদের আন্দোলনকে দমন করে সামরিক বাহিনী।
সম্প্রতি মহামারির আগে থেকেই হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিরা চীনপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। ব্যাপক ধরপাকড়ের পর আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হলেও পুরোপুরি থেমে যায়নি।
এরই ধারাবাহিকতায়, গত অক্টোবরে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। হংকং-এর গণতন্ত্রকামীদের প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর অপসারণ চাইছিল।
ভাস্কর গ্যালকিওট ভাস্কর্যটিকে ডেনমার্কে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যদি তাকে নিশ্চিত করা হয়, হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে না। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত সফল হননি।
বুধবার গভীর রাতেই শ্রমিকরা এসে স্মৃতিস্তম্ভের আশপাশে অস্থায়ী প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তার কিছু দূরেই রক্ষীরা টহল দিচ্ছিলেন। এর মাঝেও সারারাত ড্রিলিংয়ের ও তামার পাতে আঘাতের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো দলকেই বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় ভাস্কর্য প্রদর্শন করতে দেয়া হবে না। এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার রাখে।
ভাস্কর্যের নির্মাতা গ্যালকিওট এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাননি। চেষ্টা করছিলেন ভাস্কর্যটিকে ডেনমার্কে ফিরিয়ে আনতে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি সরাতে গিয়ে ভাস্কর্যের কোনো ক্ষতি হয়, তবে তিনি ক্ষতিপূরণ চাইবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সত্যিই জানি না, কী হচ্ছে। তবে আমি ভয় পাচ্ছি, তারা ভাস্কর্যটিকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।’
গ্যালকিওট আরও বলেন, ‘এটি আমার ভাস্কর্য, আমার সম্পদ।’
হংকং ব্রিটেনের অধীনে থাকার সময় ১৯৯৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। দুই দশকের বেশি অবস্থানের পর এবার কর্তৃপক্ষ তা সরিয়ে নিল।