যুক্তরাষ্ট্রে ওমিক্রন আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে দেশটির কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানিয়েছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশব্যাপী ওমিক্রন আক্রান্তের হার ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার সিডিসির প্রকাশিত তথ্য মতে, ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশটিতে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ৭৩ শতাংশের শরীরে ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছে।
দেশটির সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত বাকি ২৭ শতাংশের শরীরে শনাক্ত হয়েছে ভাইরাসটির আগের ধরন ডেল্টা।
দেশটির স্বাস্থ্য ও রোগবিষয়ক সংস্থা সিডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগের সপ্তাহে (৩ ডিসেম্বর-১১ ডিসেম্বর) আক্রান্তের কারণ ছিল শেষ সপ্তাহের পুরো বিপরীত।
সেই সময় ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছিল শুধু ৩ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে। তখন ডেল্টায় আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ৯৭ শতাংশ।
বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রনে এরই মধ্যে গেল সোমবার টেক্সাসে মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধের। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই বৃদ্ধের করোনা প্রতিরোধী টিকা নেয়া ছিল না।
এই ছুটির মৌসুমে মূল দুটি উৎসব বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের উৎসবকে ঘিরে ফের আশঙ্কাজনকভাবে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এরই মধ্যে করোনা পরীক্ষায় দীর্ঘ সারি দেখা গেছে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটনসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ও বড় শহরগুলোতে। ভ্রমণে বিভিন্ন মাত্রায় বিধিনিষেধ থাকায় ছুটিতে ভ্রমণের অনুমতি পেতে তারা করোনা পরীক্ষার সনদের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
সংক্রমণ রুখতে ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র ফের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং শহরবাসীকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছেন। গত ২২ নভেম্বর সেখানে মাস্কের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) রোববার জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি তিন দিনে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
ছুটির সময়ে উৎসব বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ বাড়াবে। সেই সঙ্গে প্রাণহানির সংখ্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে উৎসবে যোগ দেয়া বহু মানুষের সংস্পর্শ। এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।
সোমবার ডব্লিউএইচওর সদর দপ্তর জেনেভায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির প্রধান।
মানুষকে উৎসবে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে টেড্রোস গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘জীবন হারানোর চেয়ে একটি উৎসবের আয়োজন বাতিল করা অনেক ভালো সিদ্ধান্ত।’
টেড্রোস বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ওমিক্রন। এমনকি যারা করোনা প্রতিরোধী টিকার দুই ডোজ সম্পন্ন করেছেন বা যারা কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছেন, তারা এবার নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন ওমিক্রনে।’
ওমিক্রনের ভয়াবহতার বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করার লক্ষ্যে ডব্লিউএইচওর প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান বলেন, ‘প্রাথমিক প্রমাণের ওপর সিদ্ধান্ত নেয়া বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে না, যে ওমিক্রন করোনার আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর (ধরন) তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ। ওমিক্রনের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব দেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ফের রোগীর চাপ বাড়ছে।’
কোভিডের জন্য দায়ী করোনাভাইরাস সার্স কভ টু-এর নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে।
আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণের দেশ বতসোয়ানায় প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভ্যারিয়েন্টের শুরুতে নাম ছিল ‘বি.১.১.৫২৯’, তবে শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দেয় ‘ওমিক্রন’।