সাম্প্রতিক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়টি যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকিতে আঘাত হানে ১৫ মাস বয়সী ক্যাডেন আর তিন মাস বয়সী ডালাসকে সেদিন দেখতে এসেছিলেন তাদের দাদি লুৎজ। কিন্তু এসেই আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের খবরটি পান তিনি।
মেট্রো জানিয়েছে, গত ১১ ডিসেম্বর রাতে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে এমন খবর পেয়ে দুই নাতিকে রক্ষার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা শুরু করেছিলেন লুৎজ। এ ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার ১ ঘণ্টা আগেই ক্যাডেন আর ডালাসকে একটি বাথটাবে নিয়ে লুকিয়ে রাখেন তিনি।
শুধু বাথটাবে রাখাই নয়, দুই নাতিকে তিনি কম্বল আর বালিশ দিয়ে এমনভাবে পেঁচিয়ে রাখেন যেন বড় কোনো আঘাত এলেও তারা তেমন ব্যথা না পায়। বিপদের কথা ভেবেই দুই শিশুর মাঝখানে একটি বাইবেলও রেখে দেন লুৎজ।
ঘড়বাড়ি কাঁপিয়ে গর্জন করতে করতে ঘূর্ণিঝড়টি যখন আঘাত হানে, তখন নিমেষেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় কেন্টাকির মেয়ফিল্ডের সেই বাড়িটি। লুৎজ দেখতে পান বাথটাব সহই উড়ে গেছে ক্যাডেন আর ডালাস। সেই মুহূর্তটির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের ধরে রাখতে পারিনি!’
ঘূর্ণিঝড়টি চলে যাওয়ার পর অন্ধকার আর ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই এদিকে-ওদিকে বাথটাব আর দুই নাতিকে খুঁজতে থাকেন লুৎজ। কিন্তু কোথাও তাদের হদিস মেলেনি।
লুৎজ জানান, সেই মুহূর্তটিতে সৃষ্টিকর্তার কাছে তিনি একটাই প্রার্থনা করছিলেন- যেন ভালোয় ভালোয় ফিরে আসে তার নাতিরা।
ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে নিজেও প্রচণ্ড আঘাত পান লুৎজ। তার মাথার পেছনে ভারী কোনো কিছুর আঘাত লাগে। কিন্তু দুই নাতিকে খুঁজে না পেয়েই পাগলপ্রায় অবস্থা হয় তার।
অবশেষে বিধ্বস্ত বাড়িটির কাছাকাছি একটি স্থানে বাথটাবটির সন্ধান পাওয়া যায়। মাটিতে উপুড় হয়ে পড়েছিল সেই বাথটাব। পরে এর ভেতর থেকে ক্যাডেন আর ডালাসকে বের করে আনেন শহরের শেরিফের কর্মচারীরা।
এই বাথটাবেই ক্যাডেন আর ডালাসকে লুকিয়ে রেখেছিলেন তাদের দাদি লুৎজ
এখনও দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে লুৎজকে। নাতিদের খুঁজে পাওয়ার মুহূর্তটির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘শেরিফের লোকেরা আমার কাছে ক্যাডেন আর ডালাসকে নিয়ে এলো। কিন্তু ডালাসের মাথার পেছনের একটি অংশ ডিমের মতো ফুলে গিয়েছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কী ঘটেছে।’
পরে অবশ্য জানা যায় ডালাসের মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আহত হলেও অলৌকিকভাবে দুই নাতির জীবন বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান লুৎজ।