কানাডার সামরিক ঘাঁটিতে নকল মসজিদের খোঁজ পাওয়া গেছে। যদিও কানাডার সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে যে স্থাপনাটিতে কখনোই গোলাবারুদসহ সামরিক কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে না।
ঘাঁটির যে অংশে সাধারণের প্রবেশাধিকার রয়েছে, ঠিক এমন একটি অংশে একজন মুসলিম ঘুরে এসে জানিয়েছেন, এই প্রথম তার কাছে মনে হচ্ছে যে কানাডায় তিনি স্বাগত নন।
ক্যালগরি রাজ্যের ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আলবার্টা প্রেইরিতে বন্ধুদের সঙ্গে শিকারে গিয়েছিলেন মাহমুদ মৌররা। শিকারের সময় তিনিই প্রথম মসজিদটি দেখতে পান।
সংবাদমাধ্যম ভাইস ওয়ার্ল্ড নিউজকে মৌররা জানান, তিনি তখন উত্তেজিত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। নাইন ইলেভেনের পর লেবানন থেকে কানাডায় আসা মৌররা চিন্তায় পড়ে যান, তিনি সঠিক জায়গায় আছেন তো!
কানাডার সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লেনা অ্যাঞ্জেল জানিয়েছেন, ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনী প্রশিক্ষণের জন্য ঘাঁটিটি ব্যবহার করার সময় ২০০৬ সালে একটি কৃত্রিম গ্রাম নির্মাণ করে। সেখানেই তারা মসজিদটি বানায়। এটি ব্রিটিশ সৈন্যরা আফগান যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করতেন। তবে এখানে কখনোই গোলাগুলির প্রশিক্ষণ হয়নি। আর কানাডার সৈন্যরা কখনোই প্রশিক্ষণের জন্য এই মসজিদ ব্যবহার করেননি। যদিও স্থাপনাটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তবে পরের বছরই এ অংশটি পুনরায় নির্মাণ করা হবে।
অ্যাঞ্জেল বলেন, 'এ স্থাপনার উদ্দেশ্য সৈন্যদের মুসলিমদের ধর্মীয় স্থাপনার বিষয়ে আরও সংবেদনশীল করে তোলা, অসহনশীল করা নয়।
'যুদ্ধের সময় সুরক্ষিত স্থানগুলো যাতে সৈন্যরা চিহ্নিত করতে পারে ও সত্যিকার অভিযানে যাওয়ার আগে যাতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারে, তার জন্যই এই স্থাপনা তৈরি করা হয়।'
আলবার্টার এই জায়গাটি ১৯৭২ সাল থেকে ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করে আসছিলেন।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কিভাবে মুসলিমদের সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ করা যায় এবং এসব ধর্মীয় স্থানকে কিভাবে সম্মান জানাতে হয়, কিভাবে সুরুক্ষিত স্থানগুলোকে রক্ষা করতে হয়, তার যথাযথ প্রশিক্ষণের জন্য সাংস্কৃতিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে নকল মসজিদটি ব্যবহার করা হতো।
এ ধরনের স্থাপনাকে কখনোই গোলাগুলির লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়নি। এমনটাই বলেছেন সেই মুখপাত্র।
কানাডার মুসলিম কাউন্সিলের প্রধান মোস্তফা ফারুক ভাইস ওয়ার্ল্ডকে বলেছেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অনেক কানাডিয়ান মুসলিম আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন এ ধরনের স্থাপনা রয়েছে।
'আমাদের ধারণা, সৈন্যদের মসজিদ আক্রমণ না করতে শেখানোর জন্য স্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে সৈন্যদের যুদ্ধ-অপরাধ না করতে শেখানোর জন্য মসজিদ নির্মাণই গভীরভাবে উদ্বেগজনক।'
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীও যুদ্ধ প্রশিক্ষণের জন্য কৃত্রিম গ্রাম নির্মাণ করে থাকে। সেসব গ্রামেও নকল মসজিদের মতো স্থাপনা থাকে। এসব স্থানে মার্কিন সৈন্যরা সরাসরি যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে।
কানাডিয়ান মুসলিমদের জাতীয় কাউন্সিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে। কাউন্সিলের প্রধান ফারুক জানান, ‘আমি আশাবাদী যে বিষয়টির ইতিবাচক সমাধান হবে।’
স্থাপনাটি প্রথম দেখতে পাওয়া মাহমুদ মৌররা সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। তিনি নিজেও বুঝতে পেরেছেন যে বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য এমন একটি স্থাপনার প্রয়োজন হতে পারে। তবে কেন মসজিদটি এমন একটি এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল, যেখানে মুসলিমরা এটি দেখতে পাবে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।