জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ মুখে তোলার আগেই মাকে হারিয়েছে যমজ দুই ভাই। অসহায় বাবা সামাজিকমাধ্যমে মায়ের দুধের সন্ধানে যোগাযোগ করলে কলকাতার ৫০ জনের বেশি মা আবেদনে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
বৃহস্পতিবার কাতর আবেদন জানিয়ে একটি ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়, 'কলকাতায় কারও চেনাজানা ব্রেস্ট মিল্ক ডোনার থাকলে একটু জানান। বাচ্চাগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।'
এই আবেগঘন আর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কলকাতার ৫০ জনের বেশি মা অচেনা-অজানা বাচ্চা দুটোকে বুকের দুধ দিতে সম্মতি জানিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
রোববার ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা অঙ্কিতা মিশ্র দুটি প্রিম্যাচিওর শিশুর জন্ম দিয়ে মারা যান। স্ত্রীকে হারিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে দিশেহারা স্বামী অমর্ত্য সিনহা বৃহস্পতিবার বলেন, 'চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, আপাতত কাজ চালাতে বেবি ফুড দেয়া হবে। কিন্তু শিশুদের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। তাই আমি কী করব ভাবছিলাম। আমার সন্তানরা বোধহয় আর মায়ের দুধ পাবে না।'
এই পরিস্থিতিতে বুধবার অমর্ত্যর এক বান্ধবী সরিতা আহমেদ সামাজিকমাধ্যমে লেখেন, 'একজন দিদি টুইন বেবির জন্ম দিয়ে কার্ডিয়াক অ্যাটাকে হঠাৎ মারা যান। বাচ্চাগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। এসএসকেএমে ভর্তি আছে। কারও চেনাজানা থাকলে, প্লিজ যোগাযোগ করুন।'
অমর্ত্য বলেন, 'কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৫০ জনের বেশি মা শিশুদের দুধ দিতে রাজি হয়ে এগিয়ে এসেছেন। কেউ বলেছেন বাড়িতে এসে খাইয়ে যাবেন। কেউ বলেছেন সংরক্ষণ করে বাড়িতে দিয়ে যাবেন। সবাই মোটামুটি বাড়ির কাছাকাছি থাকেন। টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া, যাদবপুর অঞ্চলে। ওদের ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।'
৫ ডিসেম্বর রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা অঙ্কিতাকে দ্রুত এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়। সেদিন রাতেই অস্ত্রোপচার করে যমজ সন্তানের জন্ম হয়। দুই সদ্যোজাতের একজনের ওজন ১ কেজি ৮০০ গ্রাম এবং অন্যজনের ১ কেজি ৯০০ গ্রাম। ৬ ডিসেম্বর আচমকা অঙ্কিতার অবস্থার অবনতি হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে মা হারা সন্তানদের বাড়ি নিয়ে এসেছেন অমর্ত্য। যমজ ভাইদের দেখে ওদের দাদু অমর্ত্যর বাবা বলেন, 'মা হারা কোথায়? ওদের তো এখন সবাই মা।'