সৌদি সাংবাদিক ও কলামিস্ট জামাল খাশোগজি হত্যায় জড়িত সন্দেহে ভুল ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ফ্রান্স। বুধবারই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম ও বয়স জামাল খাশোগজি হত্যাকাণ্ডে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ও বয়সের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় এ বিভ্রাট হয়।
ফরাসি কর্তৃপক্ষ, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে প্যারিসের চার্লস-ডি-গল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করেছিল।
খাশোগজি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৬ জনের একটি তালিকা করেছে তুরস্ক। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। আছে ইন্টারপোলের রেড নোটিশও।
এদের মধ্যে একজন খালেদ আবেহ ওতাইবি, যার সঙ্গে ফ্রান্সের বিমানবন্দরে আটক হওয়া ব্যক্তির নাম ও বয়স মিলে যায়। ওতাইবি নামের এই ব্যক্তির অনুপস্থিতিতেই তুরস্কে দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। খাশোগিকে হত্যার সময় ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে হিট স্কোয়াডের অংশ ছিলেন এই ব্যক্তি। হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
প্যারিসের প্রধান প্রসিকিউটর এক বিবৃতিতে বলেন, গভীরভাবে পরিচয় যাচাইয়ের পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এই গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। তাই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার শেষ রাতের দিকে ফরাসি কর্তৃপক্ষ যখন গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে, তখন প্যারিসে সৌদি দূতাবাস এক বিবৃতিতেও দাবি করেছিল, ওই ব্যক্তির সঙ্গে খাশোগি হত্যা মামলার কোনো যোগসূত্র নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত জামাল খাশোগজি ছিলেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমানের একজন কট্টর সমালোচক। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে সঙ্গে নিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন তিনি। হাতিসকে বিয়ে করতে কিছু কাগজ দরকার ছিল তার।
খবর পেয়ে রিয়াদ থেকে বিশেষ বিমানে সেদিন ইস্তাম্বুল আসেন ১৫ সদস্যের একটি দল। কনস্যুলেটে ঢোকার কয়েক মিনিটের মাথায় চেতনানাশক দেয়া হয় খাশোগিকে। শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ টুকরা টুকরা করে স্থানীয় এক পরিচ্ছন্নতাকারীর সহায়তায় কনস্যুলেট থেকে বের করা হয়।
শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে অভিযোগ মেনে নেন সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। দায় চাপায় ওই দলের সদ্যদের ওপর।
তুমুল সমালোচনার মুখে ২০১৯ সালে গোপনে বিচারকাজ শেষ করে সৌদি সরকার। হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। পরে অবশ্য সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় তাদের। আর এ ঘটনা গোপন করার চেষ্টার দায়ে ৩ জনকে দেয়া হয় ৭ থেকে ১০ বছরের জেল।