মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন আদালত।
‘গণ অসন্তোষে’ উসকানি ও করোনাভাইরাসের আইন ভাঙার দায়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইনে এ সাজা দেয়া হয়েছে তাকে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, সু চির সঙ্গে একই অভিযোগে সমান চার বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্তকেও।
৭৬ বছর বয়সী সু চির বিরুদ্ধে দেশটির জান্তা সরকার বিভিন্ন অভিযোগে এক ডজনের বেশি মামলা করেছে। যদিও সু চি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সু চির বিরুদ্ধে প্রায় ১০ মাসে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন, দুর্নীতি, প্রতারণা, করোনাভাইরাস মহামারিকালীন বিধিনিষেধ উপেক্ষা, অবৈধ ওয়াকিটকি আমদানিসহ কমপক্ষে ১২টি মামলা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
সব শেষ তার বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার কেনা ও ভাড়া দেয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলা করে সেনা সরকার।
চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সেনাবাহিনী; আটক করে শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্তসহ অনেককে।
তখন থেকেই সু চিকে বন্দি করে রাখে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তবে সু চিকে কবে, কখন এবং আদৌ কারাগারে নেয়া হবে কি না সে সম্পর্কে জানা যায়নি।
তাদের গ্রেপ্তারের পর থেকেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে নজিরবিহীন বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে মিয়ানমার। বিক্ষোভ দমনে কঠোর হয় সেনাবাহিনী।
নিজের বিরুদ্ধে আনা সামরিক সরকারের এসব মামলার বিরুদ্ধে সু চি লড়াই করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নতুন গঠন করা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের এক মুখপাত্র।
এই সরকারে রাখা হয়েছে গণতন্ত্রপন্থি নেতা ও সমর্থকদের। এ ছাড়া সমমনা আরও কিছু দলের নেতারাও এই সরকারের হয়ে কাজ করছে।
সে সরকারের মুখপাত্র ড. সাসা বলেন, ‘তিনি (সু চি) ঠিক নেই। মিলিটারি জেনারেল তাকে ১০৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা তাকে কারাগারেই মেরে ফেলতে চান।’
গত বছর নির্বাচনে এনএলডি ভূমিধ্বস জয় পাওয়ার পর সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ক্ষমতা কেড়ে নেয়।
এ পর্যন্ত দেশটিতে ১ হাজার ২০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা এবং ১০ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স।
বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সু চি। তাই দেশটিতে সামরিক শাসন অব্যাহত রাখতে সু চিকে সারা জীবনের জন্য রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে চায় সেনাবাহিনী। ফলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এসব মামলা দিয়ে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।