১৯৮৫ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রচ্ছদে ছাপা হয় শরবত গুলার ছবি। ১০ বছর বয়সী শরবতের সেই ছবিটি নিয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর কারণ তার বিরল সবুজ চোখ। ‘আফগান গার্ল’ শিরোনামে সেই ছবিটি দীর্ঘস্থায়ী আফগান যুদ্ধের প্রতীক হয়ে ওঠে। আলোচিত সেই আফগান নারীকে এবার নাগরিত্ব প্রদান করেছে ইতালি।
শুক্রবার রয়টার্সের বরাতে দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির দপ্তর থেকে শরবত গুলাকে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইতালিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত আগস্টে তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন শরবতও। পরে তিনি ইতালির রোমে অবস্থান নেন। তবে ঠিক কবে তিনি ইতালিতে পা রেখেছেন সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
‘আফগান গার্ল’ শিরোনামে ১০ বছর বয়সী শরবতের সেই বিখ্যাত ছবিটি ১৯৮৪ সালে তুলেছিলেন ফটোগ্রাফার স্টিভ ম্যাককারি। যুদ্ধ কবলিত আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে শরবত সে সময় পাকিস্তানের পেশোয়ারে একটি শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছিলেন। তাঁবুতে পরিচালিত শরণার্থীদের এক স্কুলে পড়তেন তিনি।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রচ্ছদে শরবতের বিখ্যাত সেই ছবি।
ছবিটিতে শরবতের চমকপ্রদ সবুজ চোখ দুটিতে একইসঙ্গে ভয় এবং দুরন্তপনার এক অদ্ভুত সম্মিলন ঘটেছিল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের কল্যাণে সারা বিশ্বে এই ছবিটি ছড়িয়ে পড়লেও শরবত গুলার অবস্থান শনাক্ত হয় ২০০২ সালে। সে সময় ১৮ বছর আগে তোলা ছবির মেয়েটিকে খুঁজে বের করতে ফটোগ্রাফার স্টিভ ম্যাককারি আবারও পাকিস্তান সফর করেন। শরবতকে খুঁজে পেয়ে তিনি তার ছবিটির কথা বলেন। কিন্তু নিজের ছবি যে এত বিখ্যাত হয়ে গেছে সে সম্পর্কে তখন পর্যন্ত কিছুই জানতেন না শরবত।
শৈশবে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়ে টানা ৩৫ বছর সেই দেশেই ছিলেন শরবত। পরে ২০১৬ সালে জাল পরিচয়পত্র বহনের অভিযোগে পাকিস্তানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনার সূত্র ধরে, আফগানিস্তানের তখনকার প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি শরবতকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেন এবং কাবুলের একটি ফ্ল্যাটে বসবাসের সুযোগ দেন। স্বামী মারা যাওয়ায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সেখানেই বসবাস করছিলেন শরবত। কিন্তু তালেবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসলে আবারও দেশ থেকে পালিয়ে অনিশ্চিত যাত্রা শুরু হয় তার।